আইনি জটিলতার কারণে চার বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালের হিমঘরে থাকা ধর্মান্তরিত হোসনে আরা লাইজুর (নীপা রানী রায়) লাশ শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ মে) বিকাল ৩টায় জানাজা শেষে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার কাজীপাড়া কবরস্থানে স্বামী হুমায়ুন কবিরের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
১২ এপ্রিল হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর বেঞ্চ হোসনে আরাকে ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার আদালতের আদেশের কপি নীলফামারী জেলা প্রশাসকের হাতে পৌঁছলে লাশ দাফনের উদ্যোগ নেয়া হয়।
শুক্রবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে হোসনে আরার লাশ কাজীপাড়া গ্রামে শ্বশুর জহুরুল ইসলামের বাড়িতে নেয়া হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদ আলী ও ওসি তদন্ত ইব্রাহীম খলিল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দাফনের আগে হোসনে আরার বাবার পরিবারকে লাশ দেখাতে আদালতের নির্দেশ থাকলেও ওই পরিবারের কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের অক্ষয় কুমার রায়ের মেয়ে নিপা রানী রায়ের সাথে পাশের বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমায়ুন কবির লাজুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর তারা বিয়ের করেন। এর আগে নিপা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং হোসনে আরা বেগম নাম নেন।
এ ঘটনায় একই বছরের ২৮ অক্টোবর নিপার বাবা বাদী হয়ে অপহরণ মামলা করেন। কিন্তু বিয়ের প্রমাণ ও নিপার জবানবন্দি পেয়ে আদালত মামলা খারিজ করে দেন। পরে নিপাকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দাবি করে আপিল করা হয়। আদালত আবেদন আমলে নিয়ে নিপাকে রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে দেন।
২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি নিপাকে সেফ হোমে রেখে তার বাবার সাথে বাড়ি ফেরার পথে স্বামী হুমায়ুন কবির লাজু অজ্ঞাত কারণে অসুস্থ হয়ে মারা যান।
অন্যদিকে নিপাকে বাড়ি নিয়ে আটকে রাখেন তার বাবা। শেষে স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে তিন মাস পর ১০ মার্চ বিষপানে আত্মহত্যা করেন নিপা।
পরে নিজ ধর্ম অনুযায়ী নিপার লাশের শেষকৃত্যানুষ্ঠান করা নিয়ে আদালতে যান শ্বশুর জহুরুল ও বাবা অক্ষয়। এ অবস্থায় চার বছরের বেশি সময় ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে থাকে হোসনে আরার লাশ।