Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ছাদহীন জেলখানার আরেক নাম প্রবাস জীবন

portugal-rasel‘প্রবাস জীবন’ এই কথাটার মধ্যে ইদানীং কারাগারের গন্ধ খুঁজে পাই। মনে হয় ছাদবিহীন এক জেলখানায় বসবাস করছি। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়- স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব ছাড়া সম্পূর্ণ অজানা এক দুনিয়া। প্রতিনিয়ত হাজারও সাদা কালো মানুষের ভিড়ে অতিপরিচিত কিছু মুখ খুঁজে বেড়ানো।

কিন্তু না, আসলে আমরা হাজার হাজার মাইল দূরে কোনো এক অজানা শহরে বসবাস করছি, যেখানে আমাদের মনের মধ্যে ভেসে বেড়ানো মানুষগুলোকে পাওয়া অসম্ভব। এ যেন জীবনের অপরিহার্য বিয়োগান্ত কালো অধ্যায়ের অংশ।

chardike-ad

কতগুলো প্রিয় মুখের হাসির জন্য প্রতিনিয়ত ভালো থাকার অনবদ্য অভিনয় করে যাচ্ছি আমরা প্রবাসীরা। এক প্রবাসী বড় ভাই আমাদের সহযোদ্ধা তার ফেসবুকে লিখেছেন ‘মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতরের সেই আমেজ তেমনটা নেই বিদেশে। ঈদে প্রবাসীদের ৯০ ভাগের বেশি মানুষ নতুন জামা কাপড় পরবে না। তারপরও তাদের ঈদ হবে এবং তারা খুশী থাকবে।’

portugal-rasel

জানা গেছে, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চুরমার করেছে এবারের ঈদ। এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। বিষয়টি পরিবার, দেশ ও জাতির জন্য আনন্দের বটে কিন্তু একজন প্রবাসী জানে এর মাঝে কত বেদনা লুকিয়ে রয়েছে। নিজেদের সর্বোচ্চ বিলিয়ে নিজের বলতে অবশিষ্ট কিছু রাখে না। এত কিছুর পরেও আমাদের প্রতিনিয়ত ভালো থাকতে হয় এবং ভালো রাখতে হয়। কিছুদিন আগে এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলছিল-

হ্যাঁলো দোস্ত কি অবস্থা তোমার?

হ্যাঁ দোস্ত ভালো আছি।

একেবারে ফোন টোন দেস না যে?

কেন…রে, তুই দিতে পারস না আমাকে? এখন তো আর ফোন দিতে টাকা লাগে না, যখন তখন ফোন দিতে পারিস। শুধু আমাকেই কেন ফোন দিতে হবে সবসময়? তোরও দায়িত্ব আছে আমার খোঁজ-খরব রাখার!

আসলেই তো তাই! এমন করে কোনোদিন ভেবে দেখিনি। এখন সময়-সুযোগ পেলে আমিও তোকে কল দিব, খোঁজ-খবর নেব।

ভালো থাকিস, পরে কথা হবে।

portugal-raselএমনটি শুধুমাত্র বন্ধুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয় কিন্তু প্রায়শ সময় এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় আমাদের। এমনকি ভাই-বোন বা নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকেও এমন অভিযোগ শোনা যায়। প্রবাসে আসলেই যেন সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে। পরিবারের ৫-৭ জন সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধবদের আর কোনো দায়িত্ব কর্তব্য নেই আমাদের প্রতি।

সম্প্রতি প্রবাসের বিভিন্ন দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ হলো মানসিক চাপ যা দেশ তথা পরিবার এবং নিকট আত্মীয়দের কাছ থেকে আসে। দেশের অতিরিক্ত মানসিক এবং আর্থিক চাপের ফলে প্রবাসীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের দিকে ঝুঁকছে বেশি আয়ের আশায়। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হয়েও অনেক প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে।

প্রবাসীরা তিল তিল করে খেয়ে না খেয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত পানি এক করে এক একটি টাকা সঞ্চয় করে। মাস শেষে তা পরিবারের মঙ্গলের জন্য রেমিট্যান্স আকারে পাঠাচ্ছে দেশে। এতে করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফিরছে পরিবারগুলোতে আর্থিক স্বচ্ছলতা। গ্রামীণ জনপদের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির বড় অবদান প্রবাসী আয়।

portugal-raselকিন্তু সেই প্রবাসীদের ঈদ কেমন কাটে? কি করে ঈদের দিনে? অথবা কি পরিধান করে বা খায় কি এমনটি কি কখনে ভেবে দেখেছেন? আমার স্বল্প প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা বলে, বেশির ভাগ মানুষ-ই ঈদের দিনে কাজ করতে হয় সিডিউল মাফিক। হোক ইউরোপ, আমেরিকা কিংবা মধ্যপ্রাচ্য, প্রবাসী শ্রমিকদের আর্তনাদ সব জায়গায় একে রকম।

আমরা এত দুঃখ বেদনা আড়াল করে ভালো থাকতে শিখে গেছি আমাদের পরিবারকে ভালো রাখার প্রচেষ্টায়। তারপরেও অনেক প্রবাসীকে নানান অপবাদ মাথায় নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়। আমরা কখনো কিছু পাওয়ার আশায় এমন ত্যাগ তিতিক্ষা শিকার করছি না। কেবলমাত্র পরিবার ও স্বদেশের ভালোবাসায় আমরা অবিরাম ভালো থাকছি এবং ভালো রাখছি। সবাইকে ঈদ উল ফিতরের শুভেচ্ছা সকল রেমিট্যান্স যোদ্ধার পক্ষ থেকে।

লেখক- মো. রাসেল আহম্মেদ