একাধিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল স্ত্রীর। সেই পরকীয়ার জেরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে থাকতো। এই অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে ৩০ হাজার টাকায় কসাই ভাড়া করে স্ত্রীকে খুন করালেন স্বামী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জিনিউজ বলছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বালি জেটিয়া হাউসের কাছে গঙ্গার ঘাটে দুটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। কালো রঙের একটি ব্যাগ ও একটি চটের ব্যাগ। কালো রঙের ব্যাগটি খোলা ছিল। এতে দেখা যায়, এক নারীর কাটা মুন্ডু রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই খবর দেয়া হয় বালি থানায়।
পুলিশ এসে ব্যাগ দুটি উদ্ধার করে। দেখা যায়, কালো ব্যাগে রয়েছে কাটা মুন্ডু ও সেইসঙ্গে দেহের উপরের অংশ টুকরো টুকরো করে কাটা। অন্য একটি চটের ব্যাগ থেকে পাওয়া যায় পাঁচটি ধারালো অস্ত্র ও জামাকাপড়।
খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল, দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ব্যাগে ভরে কেউ গঙ্গায় ফেলে দিয়েছে। কিন্তু দুটি ব্যাগ পাওয়া যাওয়ায় পুলিশ নিশ্চিত হয়, একসঙ্গে দুটি ব্যাগ ভেসে আসতে পারে না। অর্থাৎ ব্যাগ দুটি কেউ ফেলে দিয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার বিষয়েও নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর ওই নারীর কাটা মুণ্ডুর ছবি থানায় পাঠানো হয় পরিচয় জানার জন্য।
শিবপুর থানা এলাকার গণেশ চ্যাটার্জি লেনের বাসিন্দা সোনি রজক নামে এক নারীর নামে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছে। যার সঙ্গে উদ্ধার হওয়া কাটা মুণ্ডর মিল রয়েছে। এরপর পুলিশ পেশায় ধোপা উপেন্দ্র রজককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ইতিমধ্যে উপেন্দ্র রজক এলাকায় রটিয়ে দিয়েছিল যে, তার স্ত্রী অন্য এক যুবকের সঙ্গে পালিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ উপেন্দ্র রজকের কথায় অসঙ্গতি পায় পুলিশ।
পরে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। প্রথমে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়। এতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে হাতে ব্যাগ নিয়ে তিন ব্যক্তি হেঁটে শিবপুর এলাকা দিয়ে যাচ্ছেন। এরপর বালিখাল এলাকারও সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়।
এতে দেখা যায়, ওই তিনজন ব্যাগসহ রিকশায় চড়ে যাচ্ছেন। এসব ফুটেজ দেখার পর স্বামী উপেন্দ্র রজককে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। লাগাতার জেরার মুখে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ স্বীকার করে উপেন্দ্র।
খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে কসাই দিলওয়ার, নিহতের স্বামী উপেন্দ্র রজক ও শাকিল আহমেদ নামে আরও এক ব্যক্তিকে। খুনে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ব্যাগের মধ্যে নিহত নারীর দেহের ওপরের অংশ পাওয়া গেলেও, নিচের অংশ পাওয়া যায়নি। শরীরের বাকি অংশের খোঁজে গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।