Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

masum‘ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে দালালের মাধ্যমে লিবিয়ার মাটিতে পা রেখেছিলাম। কিন্তু সবকিছু হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছি শূন্য হাতে। এরপরও মৃত্যুকূপ থেকে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছি- এটাই অনেক।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখাড়া গ্রামের মাসুম হোসেন খান (২১)। বাবা দেলোয়ার হোসেন খান ইতালি প্রবাসী, মা মাহমুদা বেগম গৃহবধূ। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে মাসুম সবার বড়।

মাসুম বলেন, ‘২০১৮ সালে এইচএসসি পাস করার পর নড়িয়া কেদারপুর এলাকার সাত্তার ঢালীর প্রলোভনে পড়ে ৭ লাখ টাকা খরচ করে বাংলাদেশ থেকে কুয়েত, আম্মান হয়ে লিবিয়া যাই। পথে পথে বুঝেছি, আমি এক অচেনা-অজানা জগতে এসেছি। ওই ৭ লাখ টাকায় লিবিয়া থেকে জাহাজের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতালি নিতে আরও ৩ লাখ টাকা দাবি করে দালাল সাত্তার। পরে তাকে আরও ৩ লাখ টাকা দেয়া হয় ‘

chardike-ad

তিনি বলেন, ‘গত ২০ রমজান রাতে জাহাজে করে লিবিয়া থেকে ইতালি নেয়ার কথা ছিল দালালদের। কিন্তু তা না করে আমাদের অভিবাসীবাহী একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ওঠাতে চায়। রাজি না হলে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেয় দালালরা। ফলে বাধ্য হয়েই নৌকায় উঠি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চারদিন ভূমধ্যসাগর সাগর পাড়ি দেই। এরপর হঠাৎ করে সাগরের মাঝখানে জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা ভাসতে থাকি। ওই নৌকায় ৭৪ জন ছিলাম। এরমধ্যে ৬৪ জন বাংলাদেশি, শরীয়তপুরের ছিলাম আমি, সদর উপজেলার ডোমসারের সোহেল ও নড়িয়া বাংলাবাজারের রাকিব। সাগরে তখন বিশাল বিশাল ঢেউ। এক সময় ঢেউয়ে নৌকার তলার একটি কাঠ খুলে যায়। তখন সবাই চিৎকার শুরু করেন। এদিকে খাবার ও পানিও শেষ হয়ে যায়। কারও সঙ্গেই ছিল না কোনো খাবার।’

yamean-boat
ফাইল ছবি

মাসুম বলেন, ‘সাগরে চার দিন অভুক্ত থাকায় কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারো শরীরেই শক্তি নেই। সবাই যেন ক্রমশ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এ অবস্থায় বাঁচার তাগিদে আমরা একজনের প্রস্রাব ১০ জনেও খেয়েছি।‘

তিনি বলেন, এ সময় হঠাৎ করে পাশে একটি তেলবাহী বড় জাহাজ দেখতে পাই। আমরা ওই জাহাজে ওঠতে চাইলে তারা আমাদের প্রথমে উঠায়নি। তখন মাদারীপুরের শাকিল ও মিরাজ নৌকায় থাকা তেলের ড্রাম নিয়ে সাগরে ঝাঁপ দেয়। জাহাজের পাশেই ভাসতে থাকে। ওরা বুঝতে পারে, দুর্ঘটনার শিকার হলে তখন জাহাজের লোকজন আমাদের উদ্ধার করবে। এক সময় অসহায়ত্ব বুঝতে পেরে জাহাজের নাবিকরা আমাদের উদ্ধার করেন। এরপর জাহাজে কেটে যায় ১৮ দিন। তারা আমাদের কমবেশি খেতে দিতেন।’

মাসুম জানান, ওই জাহাজটি তাদের ২০০ কিলোমিটার দূরে তিউনিসিয়া বন্দরে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে বাসে করে তিউনিসিয়া শহরে নিয়ে ৭ দিন রাখে। পরে লিবিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও আইওএমের (আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা) লোকজন এলে ওরা তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করে। তারা প্রথমে রাজি হননি। সেখানেই কাজের ব্যবস্থা করে দেয়ার দাবি জানান। কিন্তু আইওএমের লোকেরো দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তি সই করে। পরে তারাই ৭ দিনের মাথায় তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, ‘গত ২৬ জুন বাংলাদেশে পৌঁছাই। নিজ চোখে দেখেছি মৃত্যু কত ভয়ংকর। আমার মতো কেউ যেন অবৈধ পথে ইউরোপে না যায়। তাহলে টাকাও যাবে, সঙ্গে জীবনটাও।’ মাসুমের মা মাহমুদা বেগম বলেন, ‘যে দালালরা আমার ছেলেকে ইতালি যাবার প্রলোভন দেখিয়ে নৌকায় তুলেছিল, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি জমানো ঠিক না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি যাওয়া উচিৎ।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ