বিশ্বব্যাপী ৭০ শতাংশ ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস (ইন্টারনেট অব থিংস) সাইবার হামলার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেন হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি)। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় এমন ১০ ধরনের ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস পরীক্ষা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে এইচপি। খবর ম্যাশেবল।
ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট সেবার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। উন্নত ইন্টারনেট সেবা ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতমানের ডিভাইসের কারণে খাতটির প্রসার ঘটছে দ্রুত। কিন্তু এ খাতে ব্যবহার হওয়া ৭০ শতাংশ ডিভাইসই সাইবার হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে এইচপির প্রতিবেদনে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল পাসওয়ার্ড ও শক্তিশালী নিরাপত্তা সফটওয়্যারের অভাবের কারণেই এ ডিভাইসগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পরীক্ষা করা ১০টি ডিভাইসের আটটিতেই শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার মতো অপশন নেই। এমনকি এ ডিভাইসগুলোয় যে ধরনের নিরাপত্তা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলোও খুব বেশি শক্তিশালী নয়। ফলে সাইবার অপরাধীরা খুব সহজেই ক্লাউড ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারবে বলে জানানো হয়।
সাইবার অপরাধ সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন খুব কম খাতই রয়েছে, যাতে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাইবার হামলা হয়নি। সাইবার অপরাধীরা মূলত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য রেখে হামলা চালালেও অন্যান্য খাতও যে তাদের হাত থেকে নিরাপদ রয়েছে তা নয়। হ্যাকাররা দ্রুত প্রসার হচ্ছে এমন ধরনের খাতগুলোয়ই অধিক হামলা চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস খাতও রয়েছে, যা দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খাতটির নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সতর্ক হওয়া দরকার বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ হাজার ৬০০ কোটি ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস ব্যবহার হবে। যেখানে ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের ধরনে আরো পরিবর্তন আসবে। ফলে বর্তমানে বাজারে থাকা ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে আগামী সময়ের ডিভাইসগুলোর ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশ্লেষকরা।
এইচপি থার্মোস্ট্যাট, স্মার্ট টিভি ও ওয়েবক্যামসহ মোট ১০ ধরনের ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস পরীক্ষা করে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের মধ্যে ওয়েবক্যামের ব্যবহার হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। আর ওয়েবক্যামের মতো ডিভাইস সাইবার হামলার শিকার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর অনেক গোপন তথ্যই চুরি যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এদিকে স্মার্ট টেলিভিশন এসেছে খুব বেশি দিন হয়নি। কিন্তু অল্প সময়ে এ ডিভাইসটি গ্রাহকদের অতি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ফলে এর ব্যবহার বেড়েছে অনেক গুণ। বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব স্মার্ট টেলিভিশন দিয়ে বাজারে দখল বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতিতে সাইবার হামলার ঝুঁকি-সংশ্লিষ্ট বাজারে ধস নামাতে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
সাইবার হামলার ঝুঁকি একদিকে যেমন ব্যবহারকারীর জন্য নেতিবাচক, অন্যদিকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ ঝুঁকি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে এর ব্যবহারও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তা কোনোভাবেই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
খাত-সংশ্লিষ্টদের মতে, ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস খাতটি যত দ্রুত বাড়ছে এর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কাও বাড়ছে তাল মিলিয়ে। বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান বাজার হিসেবে মোবাইল ডিভাইসের বাজারকেই ধরা হয়। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের বাজার এত দ্রুত বাড়ছে যে, তা শিগগিরই মোবাইল ডিভাইসের বাজারকেও ছাড়িয়ে যাবে। এক্ষেত্রে সাইবার হামলার ঝুঁকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে এইচপি জানায়, তারা যেসব ডিভাইসের ওপর পরীক্ষা চালিয়েছে, তার মধ্যে প্রায় আটটি ডিভাইসের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটিতেই প্রায় ২৫ ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে, যা সাইবার হামলার ঝুঁকি অত্যধিক পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
সাইবার হামলা প্রতিরোধে বিশ্বের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই তাদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। নিরাপত্তা সফটওয়্যার নির্মাতারা দিন দিন আরো উন্নত ও নিরাপদ সফটওয়্যার তৈরির চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট-সংশ্লিষ্ট ডিভাইস খাতে হামলার ঝুঁকি সাধারণ গ্রাহকের মনে শঙ্কা তৈরি করছে। এ পরিস্থিতিতে এই ডিভাইসগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এখন সময়ের দাবি। তবে এ খাতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রঃ বণিকবার্তা