Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

malaysia-bangladeshiমালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা ‘ব্যাক ফর গুড’ (বিফোরজি) কর্মসূচির আওতায় ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ১১ হাজার ৫৪৮ বাংলাদেশি। এর মধ্যে ১০ হাজার ১৩৯ পুরুষ এবং ১ হাজার ৪০৯ নারী। বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে দেশটির ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির আওতায় ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৩৬৪ জন অবৈধ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ৪৬ হাজার ৯৭৬ জন ব্যাক ফর গুডের আওতায় নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন এবং ১৯ হাজার ৩৮৮ জন নিজ দেশে ফিরে যেতে অপেক্ষায় রয়েছেন।

chardike-ad

এদিকে দেশে ফিরতে প্রতিদিন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পাস নিতে ভিড় করছেন তারা। দূতাবাসে ট্রাভেল পারমিট (টিপি) ইস্যুতে কঠোর নজরদারির পরও থেমে নেই দালালদের দৌরাত্ম্য। কাউকে ট্রাভেল পাসের জন্য অর্থ দিয়ে থাকলে এবং প্রতারিত হলে তথ্য ও প্রমাণাদিসহ মিশনে যোগাযোগ করতে বলা হলেও অবৈধ বাংলাদেশিরা ট্রাভেল পাস পেতে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম বলেন, দালাল বা প্রতারকদের সঙ্গে লেনদেন না করতে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত এ কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কোনো তথ্য নেই বা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করেছে এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছে এমন ব্যক্তিরা সহজ শর্তে মালয়েশিয়া ত্যাগের সুযোগ পাবেন।

‘এ কর্মসূচি ১ আগস্ট শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং নিশ্চিত (কনফার্মড) বিমান টিকিটসহ আবেদন করতে হবে এবং জরিমানা ও স্পেশাল পাস বাবদ সর্বসাকুল্যে ৭০০ রিংগিত জমা দিতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আবেদনের এক কার্যদিবসের মধ্যেই স্পেশাল পাস বা বহির্গমনের অনুমতি প্রদান করবে। এই অনুমতি প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই মালয়েশিয়া ত্যাগ করতে হবে। কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়াজুড়ে ২০০ কর্মকর্তার সমন্বয়ে ৮০টি কাউন্টার খোলা হয়েছে। এ সব কাউন্টার থেকে অবৈধদের ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়তা করছে মালয়েশিয়া সরকার। এই সুযোগ যারা নেবে না, নতুন বছরের শুরুতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিজ দেশে ফেরার আগে অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে কোনো কোম্পানির দেনা-পাওনা থাকলে, তা মীমাংসার দায়িত্ব নেবে না মালয়েশিয়া সরকার। কর্মীদের তাদের নিজ উদ্যোগেই কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে দেনা-পাওনা মেটাতে হবে।’

জহিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশন ইচ্ছুক অবৈধ প্রবাসীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানিমুক্ত সহজ পদ্ধতি প্রবর্তন এবং জেল জরিমানা ব্যতিরেকে দেশে ফেরা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে আসছিল। ফলে মালয়েশিয়া সরকার ‘বিফোরজি’ কর্মসূচি চালু করেছে। কেননা বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্রেফতার, জরিমানা ও কারাবরণ শেষে ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে অবস্থানের পর দেশে ফেরত যেতে হয়; আত্মসমর্পণকারীদের স্পেশাল পাস বা বহির্গমন অনুমতি পেতে ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হয় এবং ৩১০০ রিংগিত বা তার বেশি জরিমানা দিতে হয়, যা তাদের জন্য কষ্টকর।

প্রতিদিন মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়া শ্রমিকরা ট্রাভেল পাস নিতে ভোর বেলা থেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশনে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। ১ আগস্ট থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৯ হাজার ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হয়েছে।

এদিকে ট্রাভেল পাস নিতে বাংলাদেশিরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সেজন্য মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে কিছু পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া প্রতারণা থেকে সাবধান হতে এবং যেকোনো এজেন্ট বা ভেন্ডরের সঙ্গে টাকা লেনদেন না করার জন্য মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে নোটিশ জারি করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রি-হায়ারিং প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়। তবে অনেক অবৈধ বাংলাদেশি প্রতারিত হয়ে এ প্রকল্পের সুযোগ নিতে পারেননি। যাদের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই-এমন অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দিতেই রি-হায়ারিং প্রকল্প গ্রহণ করে দেশটির সরকার। মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং প্রকল্প প্রায় আড়াই বছর ধরে চলে।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক খায়রুল দাজাইমি আবু দাউদ জানিয়েছেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ অভিবাসীকে বিফোরজি পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না প্রশাসন।

দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলার (২) মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত এ কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়ায় প্রবেশের কোনো তথ্য নেই বা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করেছে এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছে এমন ব্যক্তিরা সহজ শর্তে মালয়েশিয়া ত্যাগের সুযোগ পাবেন। দূতাবাস থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিনশ ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন জমা পড়ছে। তবে ট্রাভেল পাস ইস্যুর ক্ষেত্রে আবেদনকারীর তথ্যাদি যাচাই-বাছাই পূর্বক ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কেউ যদি তথ্য গোপন রাখে অথবা তথ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হবে না।

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া থেকে