মিয়ানমারে সরকার বিদ্রোহ দমনের নামে শতাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত আইনজীবীরা। এদিকে রোহিঙ্গা হত্যার খবরে সাবেক জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানসহ আন্তর্জাতিক মহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খবর এপি ও চ্যানেল নিউজ এশিয়া।
আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের কো কো লিন বুধবার ফোনালাপে জানান, গ্রামবাসীদের মতে শনিবারের পর থেকে অন্তত ১৫০ জনকে হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। তিনি আরো জানান, সরকার হত্যা ও অন্যান্য ঘটনা ধামাচাপা দিতে কোনো সাংবাদিক কিংবা ত্রাণকর্মীকে এ এলাকায় প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এসব নিয়ে সরকার মিথ্যাচার করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মঙ্গলবার মিয়ানমার সরকার ৬৯ জন ‘সহিংস আক্রমণকারী’ ও নিরাপত্তা বাহিনীর ১৭ সদস্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করে। এক্ষেত্রে আক্রমণকারীদের চিহ্নিত করা যায়নি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী রাখাইন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে ছিল। আক্রমণকারীরা কয়েকশ বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে বলে সরকার দাবি করে।
এদিকে এ ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। সহিংসতার জন্য মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করেছে বিভিন্ন মহল। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা নিরসনে মিয়ানমারকে আরো বেশি কিছু করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা এবং সেনাবাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কফি আনান। বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, গত ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যের সীমান্ত চৌকিতে হামলার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সেনা অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এখন পর্যন্ত কয়েকশ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে সেনাবাহিনীর এ অভিযানে আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা দলে দলে গ্রাম ছাড়তে শুরু করেছে। জাতিসংঘের মতে, প্রায় দেড় লাখ লোক অধ্যুষিত অত্যন্ত দরিদ্র এ এলাকায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে কোনো ধরনের মানবিক সাহায্য গিয়ে পৌঁছায়নি। সাম্প্রতিক সহিংসতায় সেখানকার প্রায় ১৫ হাজার লোক বাস্তুহারা হয়েছে। অনেকেই নদী, সাগর ও স্থলসীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাশের দেশগুলোয় ঢোকার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতিহত করতে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নদীপথে দেশ ত্যাগের সময় গুলিতে অন্তত ৭২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নদীটির তীরে মানুষের ভিড়ের ওপর গুলি চালিয়েছে সেনাবাহিনী। অনেকের মরদেহ নদীতে ভাসতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।