Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

প্রকৃত পিতামাতার খোঁজে বিজ্ঞাপনের আশ্রয়

অনলাইন প্রতিবেদক, সিউল, ৪ ডিসেম্বর ২০১৩:

তথ্যের ঘাটতি ও ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কারনে জন্মদাতা বাবা-মার খোঁজে কোরিয়ায় আসা এক নারী শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞাপনের আশ্রয় নিয়েছেন। সারাহ ইশিদা (২৯) নামের কানাডা প্রবাসী এই কোরিয়ান নারী ২০১২ সালে কোরিয়ায় ফিরে এসে তার আসল পিতামাতার খোঁজে নামেন। তাকে যেখান থেকে পাওয়া গিয়েছিল, যেখানে শৈশবে বেড়ে উঠেছিলেন সেসব জায়গা থেকে শুরু করে যেসব কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনুসন্ধানে সহায়তা দিয়ে থাকে তাদের কাছে গিয়েও আশানুরূপ কোন ফল না পাওয়ায় পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে শেষ চেষ্টা করতে চাইছেন তিনি।

chardike-ad

সারাহ’র ভাষ্য অনুযায়ী হাম নামের অষ্টাদশী এক তরুণী সিউলের ছাংসিন-দোংয়ে একেবারে নবজাতক অবস্থায় তাকে কুড়িয়ে পান এবং মিয়া-দোংয়ের একটি পুলিশ বক্সে রেখে আসেন। সেখান থেকে নয় মাস পর এক কানাডিয়ান দম্পতি তাকে দত্তক নিয়ে যায়।

20131126000904_0দত্তক সংস্থাগুলোতে গিয়ে কাজের কাজ বলতে হয়েছে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা। এসব সংস্থায় প্রতিনিয়ত নতুন তথ্য আসলেও বিভিন্ন কারনে সেগুলো তিনি পুরোপুরি বুঝতে পারতেন না এবং এ ব্যাপারে সাহায্য চাইলে দত্তক নীতিমালার দোহাই দিয়ে তাকে বিস্তারিত জানতে দেয়া হতো না। ইশিদা বলছিলেন, “সর্বশেষ আমি যখন সেখানে যাই তখন কিছু নতুন ছবি পাই যেগুলো আমি আগে দেখি নি। সেসব দেখতে চাইলে তারা জানায় যে আইনগত কারনে আমি এগুলো আর দেখতে পারবো না। কিন্তু এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যা তারা কখনও দেয় না।” অপর একটি সংস্থা তাকে জানায় যে তরুণী তাকে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন তার খোঁজে তারা অনুসন্ধান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। আবার শুরু থেকেই তাকে বলা হচ্ছে এ ধরনের অনুসন্ধান বেআইনি। স্থানীয় একজন সমাজকর্মী সারাহকে বেশ সাহায্য করলেও তার ইংরেজী জ্ঞান আইনি জটিলতাগুলো ব্যাখ্যা করার মতো যথেষ্ট ভালো নয়।

ইশিদার অনুসন্ধানকে আরও কঠিন করে তোলার জন্যই হয়তো তার নয় মাসের বাসস্থান এতিমখানাটিও আর নেই। নেই সেই পুলিশ বক্সটি, এমনকি যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গ্রহণ করেছিলেন তার নামও পুলিশের কোন রেকর্ডে পাওয়া যায় নি। অনেকে তাকে টিভি প্রোগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও ইশিদার আশঙ্কা সেখানে এমন অনুসন্ধানীদের ভিড় লেগেই থাকে। এই যৎসামান্য তথ্য নিয়ে তিনি কোন সুযোগই পাবেন না। তবে তাই বলে এত সহজেই হাল ছেড়ে দিতেও রাজী নন তিনি। গত মাসে বন্ধুদের সাথে নিয়ে মিয়া-দোংয়ে পোস্টার-লিফলেট বিলি করেছেন। তাতে নতুন কোন খবর না আসলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ মহলের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। তার গল্প ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও। এই প্রাপ্তিই তাকে আবারও বিজ্ঞাপন প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করছে। চলতি সপ্তাহেই কোরিয়ায় তার বর্তমান আবাস দেজন থেকে সিউল যাবেন ছাংসিন-দোংয়ে বিজ্ঞাপন দেয়ার উদ্দেশ্যে।

সামনের ফেব্রুয়ারীতে কোরিয়ায় ইশিদার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপরই তাকে ফিরে যেতে হবে কানাডায়। “কোরিয়া ছেড়ে যেতে কষ্ট হবেই”, বলছিলেন ইশিদা। কিন্তু তারচেয়েও বেশী যে প্রশ্নটা তাকে পোড়াচ্ছে সেটা হল, কেন তাকে জন্মের পরপরই এভাবে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। কি পরিস্থিতিতে কেন তার পরিবার তাকে নবজাতক অবস্থায় পরিত্যাগ করেছিল, কেনইবা তাকে পালিত কন্যা হিসেবে বেড়ে উঠতে হল- এসব প্রশ্নের উত্তর চান ইশিদা। কিন্তু তিনি এখনও জানেন না এসব প্রশ্নের উত্তর যাদের কাছে রয়েছে তার সেই জন্মদাতা পিতামাতা আদৌ বেঁচে আছেন কিনা।