Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

স্বীকৃতি মিলল দশ হাজার ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবার

অনলাইন প্রতিবেদক, ৮ ডিসেম্বর ২০১৩, সিউল:

বিগত চৌদ্দ বছরে দশ সহস্রাধিক ঘণ্টা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার স্বীকৃতিস্বরূপ সিউলের সংপা জেলার একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্টকে বিশেষ সম্মাননা পুরষ্কারে ভূষিত করেছে জেলা প্রশাসন। ৫৩ বছর বয়সী লি জং হুনের হাতে গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। অন্তত এক দশককাল প্রতিদিন গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা স্বেচ্ছাশ্রম প্রদানকারীদেরকে ‘পাইন ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ নামের এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।

chardike-ad

17-02(70)পুরস্কার পেয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় লি বলেন, “আমাদের জেলায় প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন যারা আমার সাথে মিলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের সহায়তা ছাড়া আমার একার পক্ষে এ অর্জন সম্ভব ছিল না। আমি তাদের সবার পক্ষ থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করলাম।”

১৯৯৯ সালে একটি পত্রিকায় কোরিয়ান সমাজের পিছিয়ে যাওয়া বিষয়ক একটি প্রতিবেদন পড়ে লি নিজের অবসর সময়ের কিছু অংশ স্বেচ্ছাসেবার কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই থেকে তিনি তাঁর নিজ এলাকা ও ন্যাশনাল পুলিশ হাসপাতালে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। লি বলছিলেন, “যেহেতু আমি নিজের ব্যবসা চালাই, আমার অবসর সময়ের পরিমাণ আর দশজনের চেয়ে বেশী। তাই প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় তাদেরকে দিচ্ছি যাদের আমার সাহায্য প্রয়োজন।”

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লি এলাকায় একা বসবাসকারী প্রবীণদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন। মা-বাবার বয়সী মানুষগুলোকে ছোট্ট খুপরি ঘরে একা একা থাকতে দেখলে লির খুব খারাপ লাগে। একবার একজন বৃদ্ধাকে খাবার দিয়ে আসার এক সপ্তাহ পর আবার সেখানে গিয়ে জানতে পারেন ভদ্রমহিলা মারা গেছেন। ঘটনাটা তিনি আজও ভুলতে পারেন না।
মাঝে মাঝে এলাকার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদেরকেও দলে নেন লি। সঙ্গত কারনেই তাদেরকে রাজী করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কিন্তু লির ভাষ্য, “প্রথম প্রথম আপত্তি করলেও একটা সময় তারা বুঝতে পারে এটা শুধু অন্যের জন্যই নয়, তাদেরও বিভিন্নভাবে উপকৃত করছে।” অনেক অভিভাবক লিকে বলেছেন যে তাদের সন্তানেরা এসব স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে যুক্ত হবার পর থেকে আমূল বদলে গেছে।

অনেক স্বেচ্ছাসেবক নিজের কাজের কথা অন্যদের বলতে না চাইলেও লি তাদের ব্যাতিক্রম। তিনি মনে করেন, “আপনি যখন অন্যদেরকে নিজের কাজের কথা বলবেন তখন সেটা আপানার কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দেবে। এজন্য আমি আমার সহচর শিক্ষার্থীদেরকে সবসময় বলি তারা যেন তাদের ভালো কাজগুলোর কথা আশেপাশের মানুষদের বলে এবং মাঝে মাঝে করেও দেখায়।
শ্রমটা বিনামূল্যে দেয়া গেলেও স্বেচ্ছাসেবার খরচটাও খুব কম নয়। তবে কাজটাকে নিজের কর্তব্য বলেই মনে করেন লি। আর তাই যতদিন সামর্থ্য আছে ততদিন এর সাথে যুক্ত থাকতে চান তিনি।
সংপা জেলা স্বেচ্ছাসেবক কেন্দ্রের যে কর্মকর্তা লির নাম এ পুরষ্কারের জন্য প্রস্তাব করেন তিনি বলছিলেন, “লির মতো স্বেচ্ছাসেবকরা নিজেরা খুব উন্নত জীবনযাপন না করা সত্ত্বেও অন্যদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।” তাদের অবদানে সংপা আজ স্বেচ্ছাসেবায় সিউলের ‘মক্কা’য় পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।