Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সাইকেল চালিয়ে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে বেড়ান ৯৫ বছরের জহিরন

lohanrবয়স ৯৫ বছর। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু উদ্যম, সাহস ও কর্মদক্ষতা একটুও কমেনি। অদম্য এই নারীর নাম জহিরন বেওয়া।

জহিরন বেওয়ার বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা তালুক দুলালী গ্রামে। স্বামী সায়েদ আলী মারা গেছেন ১৯৬৮ সালে। এরপর শারীরিক ও মানুষিকভাবে ভেঙে পড়েন জহিরন বেওয়া।

chardike-ad

তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলী ৬৮ বছর বয়সে মারা যান। ছোট ছেলে তোরাব আলীর বয়স ৫৯। সংসারে এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর কর্মউদ্যমী হয়ে বেঁচে আছেন।

এ বয়সে তার বাড়ির বারান্দায় কিংবা কোনো গাছের ছায়ায় বসে নাতি-নাতনিদের গল্প শোনানোর কথা। কিন্তু তিনি প্রতিদিন ছুটে বেড়াচ্ছেন গ্রামের পর গ্রাম মাইলের পর মাইল। কারো অসুস্থতার খবর পেলেই নাওয়া-খাওয়া ভুলে বাইসাইকেলে ছুটে যান সেই রোগীর বাড়িতে চিকিৎসা সেবা দিতে।

সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি ভেঙে ১৯৭৩ সালে জহিরন পরিবার পরিকল্পনার অধীনে স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নেন। পরে চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কাজে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেন। ২০০ থেকে ৩০০ অবশেষে ৫০০ টাকা মাসিক মজুরি পেয়ে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান জহিরন।

চাকরি বাদ দিলেও অর্জিত অভিজ্ঞতা বাদ দেননি তিনি। তাই বাড়িতে বসে না থেকে আবারো গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন জহিরন। এখনো কাজ করছেন হাসিমুখে। গ্রামের লোকজনের কাছে তার বেশ সুনাম রয়েছে। কেউ জহিরন দাদি কেউবা নানি আবার কেউবা জহিরন আপা বলে সম্বোধন করেন তাকে।

ভেলাবাড়ী গ্রামের স্কুলশিক্ষিকা রাবেয়া সুলতানা জানান, গত ৪৪ বছর ধরে জহিরন বেওয়াকে দেখছি বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামের পর গ্রাম মাইলের পর মাইল ঘুরে ঘুরে গ্রামের অসহায় মানুষগুলোকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছেন।

কথা হলে জহিরন বেওয়া বলেন, ‘আমি শুধু জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, শারীরিক দুর্বলতার মতো সাধারণ রোগের চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এজন্য আমাকে কোনো টাকা দিতে হয় না। তবে আমি বাজারমূল্যে তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন গড়ে দেড়শ টাকা আয় হয়।’

তিনি বলেন, আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রামে দু’হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে আমার নিবিড় যোগাযোগ। আমি প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে ৭টি গ্রামে ৭০টি বাড়ি যাই। তাদের খোঁজখবর নিই।

সৌজন্যে- জাগো নিউজ