সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিল মোদি সরকার। জওহরলাল নেহেরুর সময়ে ভারতীয় সংবিধানে কাশ্মীরকে দেয়া বিশেষ মর্যাদা ৩৭০ অনুচ্ছেদটি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। উল্লেখিত অনুচ্ছেদটি বাতিলের কারণে অবধারিতভাবে সংবিধানের ৩৫-ক ধারারও বিলুপ্তি ঘটল।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যসভায় এ ঘোষণা দেন। বিজেপি জোটের নির্বাচিত প্রতিশ্রুতি ছিল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করা।
সোমবার রাজ্যসভার অধিবেশন শুরু হতেই সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার ঘোষণা দেন অমিত শাহ। সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীরা তুমুল হই হট্টগোল জুড়ে দেন। কয়েক মিনিটের জন্য অধিবেশন মুলতবি করা হয়। পুনরায় অধিবেশন শুরু হলে বিরোধীদের হট্টগোলের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির নির্দেশনামা পড়ে শোনান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৫-ক ধারা অনুযায়ী কাশ্মীরের বাসিন্দা নয়—এমন ভারতীয়দের সম্পদের মালিক হওয়া এবং চাকরি পাওয়ায় বাধা আছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরের এমন এক স্বায়ত্তশাসন রয়েছে, যা ১৯৪৭ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো ‘দেশীয় রাজ্য’ পায়নি।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়। এছাড়া পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।
গত কয়েকদিন ধরেই কাশ্মীরে চরম উত্তেজনা চলছিল। আতঙ্কিত মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছিলেন। শনিবার পর্যটকদের কাশ্মীর ত্যাগের নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত ১০ হাজার সেনা। গত রাতে গৃহবন্দি করা হয় কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখমন্ত্রীকেও।
কাশ্মীরের চলমান অস্থিরতার মধ্যেই গত রাতে ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এবং মেহবুবা মুফতিকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। এ ছাড়া গৃহবন্দি হয়েছেন বিধায়ক সাজ্জাদ লোন। এদিকে সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামি এবং কংগ্রেস নেতা উসমান মজিদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার রাজধানী নয়াদিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র দিনভর দফায় দফায় বৈঠক অন্য দিকে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারির কারণে উৎকণ্ঠার পারদ চড়ছিল কাশ্মীরে। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, কেন্দ্র ঠিক কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। অবশেষে সোমবার সকালেই এমন ঘোষণা এলো।
কাশ্মীরে যে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল গত কয়েকদিন ধরেই। গত শনিবার হিন্দু তীর্থযাত্রীদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে পর্যটকদের দ্রুত কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। এ ছাড়া মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত সেনা। মানুষ আতঙ্কিত হলে গোটা উপত্যকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গোয়েন্দা সূত্রে সম্ভাব্য জঙ্গি হামলা হবে বলে জানতে পেরেছে। তবে অনেকেই বলছেন সংবিধানে কাশ্মীরে বিশেষ অধিকার সম্বলিত ৩৫-ক এবং ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের চেষ্টা করছে সরকার। তবে কাশ্মীরের রাজ্যপাল এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও কেন্দ্রীয় সরকার এ নিয়ে চুপ ছিল।
রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছিলেন, সেনা মোতায়েনের পেছনে সরকারের অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। সোমবার তাদের শঙ্কাই সত্য বলে প্রমাণিত হলো। রোববার সন্ধ্যায় একটি সূত্রে শোনা যায়, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশ্য সে কথা স্বীকার করেনি সরকার।
তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, বিতর্কিত এই উপত্যকাটির বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে থানা পাহারা দিচ্ছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ। এ ছাড়া বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ফিরিয়ে আনা হয়েছে যুব ক্রিকেটারদেরও।
শনিবার উত্তেজনা চরমে উঠলে রোববার কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির বাড়িতে এক সর্বদলীয় বৈঠকে মিলিত হন। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা খর্ব করার চেষ্টা হলে একযোগে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তাই তাদেরকে ওইদিন রাতেই গৃহবন্দি কিংবা আটক করা হয়।
সৌজন্যে- জাগো নিউজ