জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমারসন দাম্বুডজো এক টুইটার পোস্টে মুগাবের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মুগাবের বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
প্রেসিডেন্ট এমারসন দাম্বুডজো তার টুইটার পোস্টে লিখেছেন, ‘খুব দুঃখের সঙ্গে আমাকে এই ঘোষণা দিতে হচ্ছে যে, জিম্বাবুয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির পিতা এবং প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে আর নেই। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার প্রতীক এবং মানুষের ক্ষমতায়নের জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন।’
রবার্ট মুগাবের মৃত্যুর খবরটি প্রথম জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিম্বাবুয়ে লাইভ। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। শুক্রবার সিঙ্গাপুর হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মুগাবের ভাইয়ের ছেলেও তা মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
রবার্ট মুগাবে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে মোট ৩৭ বছর ছিলেন জিম্বাবুয়ের সরকার প্রধান। এরমধ্যে ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং ১৯৮৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন রবার্ট মুগাবে। ১৯৬০ এর দশকে মুগাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়নের (জানু) মহাসচিব ছিলেন তিনি। তার দল সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ শাসক ইয়ান স্মিথের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
১৯৬৪ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দশ বছরের অধিক সময় তাকে রোডেশিয়ার কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে অবস্থান করতে হয়। এডগার তেকেরের সঙ্গে ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়ে রোডেশিয়া ত্যাগ করেন। মোজাম্বিকে অবস্থান করে জিম্বাবুয়ের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা রোডেশিয়ান বুশ ওয়ারে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৯ সালে শেষ হওয়া ওই যুদ্ধে মুগাবে অনেক আফ্রিকাবাসীর মন জয় করে বীরের মর্যাদায় অভিষিক্ত হন। ১৯৮০ সালের সাধারণ নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এতে মুগাবে জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অভিষিক্ত হন।
জিম্বাবুয়ে ১৯৮০ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রবার্ট মুগাবে ক্ষমতায় ছিলেন। প্রায় চার দশক (৩৭ বছর) শাসনের পর তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করেন। দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার জ্যাকব মুডেন্ডার কাছে ২১ নভেম্বর ২০১৭ পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।