দুই দশক পার হলেও পার্বত্য শান্তিচুক্তির পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ফের পার্বত্যাঞ্চল অশান্ত হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।
পাবর্ত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা এসব কথা বলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবারই এক অনুষ্ঠানে চু্ক্তির অন্য শর্তগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। তার একদিন পর সন্তু লারমা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ছেড়েছিলেন সন্তু লারমা। এই চুক্তির দুই দশক পূর্তিতেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে হতাশা প্রকাশ করে এই পাহাড়ি নেতা বলেন, ১৯৯৭ সালে আজকের প্রধানমন্ত্রীই চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। তিনি সেদিন যেসব কথা বলেছেন, আর আজকে তিনি যা বলছেন, তাতে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। তার কথায় পাহাড়িদের বঞ্চনা, শোষণ ও নিপীড়নের কথাই খুঁজে পাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির সঙ্গে ‘প্রতারণা করা হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করেন সন্তু লারমা।
তিনি বলেন, এসব কিছুর পরে মনে হয়, আমরা যেন সেই পাকিস্তানি শাসনমালের মতোই একটি ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থায় আছি। এ উপনিবেশ তো আমরা চাইনি। বিশেষ শাসিত অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তা করা হয়নি। গোটা চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
চুক্তির আওতায় গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেন, আজকে আঞ্চলিক পরিষদকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখেছে সরকার ও মন্ত্রণালয়। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে আগুন জ্বলবে। সরকার যদি জুম্ম জাতির অধিকার দমনে অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করে, তবে আজকের নিরস্ত্র জুম্মরাও হাতে অস্ত্র নিয়ে তাদের উত্তর দেবে, বলেন সন্তু লারমা।
শান্তি চুক্তি অনুসরণে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি, সেনা শাসন প্রত্যাহার, জুম্মদের শিক্ষা সংস্কৃতি রক্ষায় সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় পার্বত্যবাসীর জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই বলে দাবি করেন তিনি। ‘সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে’ পার্বত্য অঞ্চলে পাঁচ লক্ষাধিক বহিরাগত ‘অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ’ করে পাহাড়িদের জমির উপর কর্তৃত্ব ফলাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সন্তু লারমা। চুক্তির আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের বাস্তবায়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সরকারকে সহযোগিতার করার জন্য জনসংহতি সমিতি প্রস্তুত রয়েছে বলেন সন্তু লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রামে নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগে স্বতন্ত্র ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার পরই তিন পার্বত্য জেলায় আঞ্চলিক পরিষদ নির্বাচন করা সম্ভব হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, অধ্যাপক সাদেকা হালিম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য।
অর্থসূচক এর সৌজন্যে