ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’
কিন্তু সম্প্রতি গণমাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছেন, “আমি শুনেছি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই।’
এই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্র জনতার ও বৈষম্যবিরোধী নেতাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন। দুধরনের বক্তব্য দেওয়ায় রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে, এবং আগামী দুই দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।
ফলে দুইদিন সকলের মুখে মুখে একটিই প্রশ্ন ঘুরছে যে, দেশের সংকটময় মূহুর্তে কে হতে পারেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি? এই প্রশ্নের উত্তরে বেশকিছু নাম এখনই সামনে আসছে।
চলুন দেখা যাক রাষ্ট্রপতি হবার দৌড়ে কারা এগিয়ে আছেন-
ড.মুহাম্মদ ইউনূস
সাংবিধানিক জটিলতার প্রশ্নকে পিছনে ফেলে, রাষ্ট্রপতি মো:সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করা হলে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামটি ঘুরেফিরে আসছে। কেন আসছে- এই প্রশ্নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন- এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক কিছু সংস্কারের বিষয় অগ্রাধিকার পাচ্ছে। সেই অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংবিধান সংস্কার। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান সংস্কারের কাজ বেশি দূর নাও এগোতে পারে। আবার যদি নতুন করে সংবিধান লেখা হয়- এ ব্যাপারে তার সহযোগিতা পাওয়া কঠিন হতে পারে। সে বিবেচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি রাষ্ট্রপতি হন তা হলে সংবিধান সংস্কারের কাজ খুব দ্রুত হবে।
সেজন্য বলাই যায় ড.মুহাম্মদ ইউনুস রাষ্ট্রপতি হবার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন।
খালেদা জিয়া
বিএনপির সাবেক চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নামও পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেউ কেউ প্রস্তাব করেছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন- স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ কোনো নারী রাষ্ট্রপতি পায়নি। এই সরকার এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারে।
খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে সুস্থ নেই। কিন্তু তিনি দলের পদ থেকে আজীবন পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার নাম সরকার থেকে প্রস্তাব করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রথম রাষ্ট্রপতিও হবেন। আমরা সবাই জানি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথাটির জন্য খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি একাই দীর্ঘদিন আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত থাকায় তিনি এই দায়িত্ব নিতে রাজি হবেন কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এছাড়াও বিএনপি তাকে দলের চেয়ারপার্সন থেকে পদত্যাগ করায় রাজি হবেন কিনা সেটাও একটা বড় প্রশ্ন।
এই দুটি মৌলিক প্রশ্নের উপরে ভিত্তি করে বলা যায় খালেদা জিয়ার প্রথম নারী রাষ্ট্রপতির সম্ভাবনা খুবই কম।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস.কে সিনহা
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পায় জাতীয় সংসদ। পরে ২০১৬ সালে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই সময় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সিনহা আপিল খারিজ করে দেন। গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন তিনি।
এতে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, নেতা ও আইনজীবীরা। শেষমেষ তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে তৎকালীন হাসিনা সরকার। এবং ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের মামলায় ঢাকার একটি আদালত এস কে সিনহাকে ১১ বছর কারাদন্ড দেয়।
কিন্তু ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে গেলে এসকে সিনহাকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছে বিচারিক বিভাগ। এবং তিনি সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতাও করছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা এসকে সিনহাকে রাষ্ট্রপতি করবার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
এই ছিলো মো: সাহাবুদ্দিনের অপসারণ পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচনায় রাখা কিছু নাম। বর্তমানে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দেশের বাইরে রয়েছেন। আগামী ২৫ অক্টোবর তিনি দেশে ফিরবেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের অপসারণের বিষয়টি সেনাপ্রধান আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।