চিত্রনায়িকা শুভশ্রীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় পরিচালক রাজ চক্রবর্তী। গতকাল শুক্রবার রাতে এই বিয়ের আয়োজন করা হয় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাওয়ালি রাজবাড়িতে। এখানে রীতি মেনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন রাজ চক্রবর্তী ও শুভশ্রী। আলো, বাজনা—সবকিছু মিলে রাজবাড়িটা ঝলমল করছিল। আনন্দ-খুশিতে আরও বেশি ঝলমল করছিল রাজ ও শুভশ্রীর মুখ। এর আগে গত ৬ মার্চ তাঁদের আইনি বিয়ে হয়েছে।
গতকাল বিয়ের লগ্ন ছিল রাত ১০টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ বিয়ের মণ্ডপে যান রাজ। সাদা ধুতি পরে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন রাজ। বিয়েতে লাল বেনারসি শাড়ি, ভারী সোনার গয়না, চন্দনে সাবেকি সাজে সেজেছিলেন শুভশ্রী। শাড়ির নকশা করেছেন সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়। রাজের পরিবারের পক্ষ থেকে নেকলেস দিয়ে আশীর্বাদ করা হয় শুভশ্রীকে। বিয়ের পিঁড়িতে বসেন রাজ ও শুভশ্রী। তাঁদের ঘিরে থাকেন আত্মীয়স্বজন আর বন্ধুরা। শুভশ্রীর সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন রাজ। শুভদৃষ্টি, সাতপাক, মালাবদল—সবই হয়েছে। তবে শুভদৃষ্টির আগেই হবু বউ শুভশ্রীর উদ্দেশে উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিতে দেখা যায় রাজকে। বিয়ের পর রাজের পরনে ছিল সবুজ পাঞ্জাবি।
বিয়েতে টালিউডের তারকাদের ভিড় দেখা যায়নি। আগামীকাল রোববার কলকাতার আরবানায় হবে রাজ আর শুভশ্রীর বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। ধারণা করা হচ্ছে, সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সব তারকাকে।
বিয়ের দিন দুপুরেও ছিল অতিথিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা। গন্ধরাজ ঘোল দিয়ে শুরু হয় মধ্যাহ্নভোজ। এরপর একে একে আসে ফ্রেশ গ্রিন স্যালাড, সাদা ভাত, গন্ধরাজ লেবু, কাঁচা মরিচ, শাক ভাজা, চিংড়ি বাটা, আম-আদা-মুগডাল, পোস্ত-নারকেল বড়া, মৌরলা মাছের পিয়াজু, ভেজ কাটলেট, ভেটকি পাতুরি, ছানার কালিয়া, কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা দিয়ে মুরগি, খেজুর-আমসত্ত্ব চাটনি, সবুর পাঁপড়, তোতা পুলি এবং মিষ্টি দই।
আর রাতে অতিথিদের জন্য ছিল ভোজের বিশাল আয়োজন। খাবারের তালিকায় ছিল লুচি ও আলু দম, ছোলার ডাল, মালাই কোফতা, চিকেন রেশমি বাটার মশালা, ভেটকি পাতুরি, হান্ডি মটন, ভেজিটেবল পোলাও, গলদা চিংড়ির মালাইকারি, ভেজিটেবল মাঞ্চুরিয়ান, ভেজিটেবল হাক্কা নুডলস, ভেজ ও নন-ভেজ স্যুপ, ফিশ ইন চিলি অয়েস্টার সস, চিকেন মালাই কাবাব, চিলি পনির, প্যান ফ্রায়েড চিলি ফিশ, চিলি গারলিক পিপার চিকেন, ক্যারামেল কাস্টার্ড, চকলেট মাডপাই, পাটিসাপটা ও ক্ষীর।
এর আগে গতকাল সকালে শুরুতে রাজের গায়েহলুদ হয়। শুভশ্রী তখন ব্যস্ত ছিলেন সাজগোজ নিয়ে। পরে মঞ্চে আসেন শুভশ্রী। ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় এই নায়িকা বর্ধমানের মেয়ে। প্রয়োজনীয় সব উপচার নিয়ে পুরোহিতকে আনা হয় বর্ধমান থেকে। আত্মীয় আর বন্ধুদের সমাগমে সব রীতি মেনে হয় গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। গায়েহলুদের পর ছিল তত্ত্ব আদান-প্রদান। দুই পরিবার থেকেই তত্ত্ব সাজিয়ে হাজির হন আত্মীয়স্বজন। সন্ধ্যায় হয় জমকালো সংগীতের অনুষ্ঠান।
রাজ চক্রবর্তীর সঙ্গে শুভশ্রীর বাগদান আর আইনি বিয়ে হয় গোপনে। গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতায় রাজের আনন্দপুর ফ্ল্যাটে আয়োজিত এই ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নিজেদের খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন বন্ধু উপস্থিত ছিলেন।
বাগদানের জন্য এত গোপনীয়তা কেন? কারণ, এর আগে রাজ আর শুভশ্রীর বিয়ের তারিখ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিয়েটা আর হয়নি। তখন তা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে নানা কিছু লেখা হয়। রাজ ও শুভশ্রীর সম্পর্কের মধ্যে বিভিন্ন সময় অনেক জটিলতা এসেছে। কখনো শোনা গেছে, তাঁরা একসঙ্গে গোয়ায় ছুটি কাটাতে গেছেন। কখনো একসঙ্গে ডিনারে যাওয়ার খবর রটেছে। কিন্তু সবকিছুকেই এত দিন গসিপ বলে উড়িয়ে দেন তাঁরা।
সেদিন রাজের আনন্দপুর ফ্ল্যাটে দুজনের জন্য ছিল একটি চকলেট কেক। এর আগে তাঁদের পরিবার এবং খুব কাছের বন্ধুদের ডাকা হয়। তাঁদের বলা হয়, রাতে ছোট একটা মিলনমেলা হবে। তবে কী কারণে এই আয়োজন, তা জানানো হয়নি। রাজ-শুভশ্রী বিষয়টি গোপন রাখেন। বাগদানের পাশাপাশি রাজ আর শুভশ্রী বিয়ে রেজিস্ট্রির কাজও সম্পন্ন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শুভশ্রীর মা এবং রাজের মা-বাবা।
বাগদান আর আইনি বিয়ের পর উপস্থিত বন্ধুদের কাছে শুভশ্রী বলেন, ‘আমাদের গল্পটা অন্য রকম। তবে আমার কাছে ভালোই লাগে। রাস্তাটা অগোছালো ছিল। এবার এক রাস্তায় বাকি জীবনটা হাঁটতে এনগেজমেন্ট করে নিলাম। প্রত্যেকের ভালোবাসা আর গুরুজনদের আশীর্বাদ আমাদের ভীষণ প্রয়োজন।