Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

অভাবে পড়ে সন্তান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করলেন মা!

vola-newsঅভাবে পড়ে সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন এক মা। ঘটনাটি ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে। ভিক্ষুকের মত মহিলা কাঁদছে আর হাটছে। এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। কাঁদছেন কেন জানতে চাইলে উত্তরটি এমন হৃদয় বিদারক হবে তা কেইবা জানত।

তিনি বলেন, আমি এক হতভাগী মা তাই কাঁদছি। কি করেন জানতেই উত্তর দিল ভিক্ষা, কান্নার কারণ টা বলবেন? হয়…আমার ৪টি সন্তান ছিল। ছোটটার বয়স ছিল ৭ মাস নাম রেখেছিলাম ইমা। অভাবে পড়ে তাকে আমি বিক্রি করে দিয়েছি।

chardike-ad

যিনি সন্তান বিক্রি করেছেন তার নাম মরিয়ম। মরিয়ম আনন্দ বাজার সংলগ্ন আঃ রবের কন্যা। পার্শ্ববর্তী শ্যামপুর তুলাতলি এলাকার বাসিন্দা ছিদ্দিক চাপরাসির পুত্র কামালের স্ত্রী।

মরিয়ম জানান, বিগত নয় মাস পূর্বে ইমার জম্মের আগেই ৩টি সন্তানসহ তাকে কিস্তির টাকার ঋণ করে ফেলে চলে যায় কামাল। কিস্তির দায় ও শারীরিক অসুস্থতা ক্রমেই ঘিরে ফেলে তাকে। এরই মধ্যে তার কোল ঝুড়ে আসে আরো এক কন্যা সন্তান ইমা। কষ্টের অমানিশায় আরো ঘিরতে থাকে তাকে। এমন সময় পালতে দিয়ে দেই ২য় সন্তান মীমকে। কান্না ভারি হতে থাকে খুদার জালা ও সন্তানের জালায়। অবশেষে শুরু করি ভিক্ষা। কিন্তু সন্তান কোলে নিয়ে হাটতে পারিনা, সন্তানটি দুধ পায়না, রোগা হয়ে যায়। তাই বিক্রি করার ইচ্ছা পোষণ করি।

সন্তান বিক্রির টাকা কি করেছেন জানতে চাইলে মরিয়ম বলেন, ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি এবং চিকিৎসা করাইছি। এখন ভিক্ষা করি, আর দুই সন্তান নিয়া গুচ্ছ গ্রামে থাকি। আমার এই ইচ্ছার কথা জানতে পেরে মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার বাসিন্দা আবুু তাহের ক্রয় করতে সম্মতি প্রকাশ করেন।

তাহের বলেন, অভাবী মা মরিয়মের সাথে কথা বলে গত ১৭ অক্টোবর ২০১৮ ইং তারিখে ২০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন। আবু তাহের বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটে চাকরি করেন বলে জানা গেছে। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর আগে বিয়ে করেন। তার কোন সন্তান নেই। তাই তিনি মরিয়মের মেয়েকে ২০ হাজার টাকায় ক্রয় করেন।

তিনি বলেন, আমার কোন সন্তান নেই। তাই একটি সন্তানের আকাঙ্খা ছিল দীর্ঘদিনের। ভোলার সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তুলাতুলি এলাকার বাসিন্দা কামালের স্ত্রী তার সন্তান বিক্রি করবেন শুনে সেখানে যাই। সন্তানের মা মরিয়ম এর সাথে কথা বলে ২০ হাজার টাকার মাধ্যমে তার সন্তান ইমাকে ক্রয় করি।

আমাদের দীর্ঘদিনের বাবা-মা ডাক শোনার শুন্যতা লাঘব হলো। আমরা এই সন্তানকে নিজেদের সন্তানের মতই লালন-পালন করবো। তবুও মা বলে কথা। যত দুরেই থাক, যত ভালো এবং সুখেই থাক মা কিন্তু তা মানতে পারেন না। তাই হতভাগী ওই মা সন্তানের কথা মনে হলেই একা একা কাঁদতে থাকেন নিজের অজান্তেই।