Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

সন্তান লালনপালনে জাপানের কিছু চমৎকার নিয়ম

japan-kidsজাপানের বাচ্চারা অনেক চমৎকার। তারা নম্র, ভদ্র এবং বন্ধুসুলভ হয়ে থাকে এবং তারা তাদের আবেগটাকে হিংস্র হতে দেয় না। জাপানে, আপনি এমন এক বাচ্চাকে খুব কমই দেখবেন, যে বাচ্চা সুপারমার্কেটে কান্না করছে। আজকে আমরা সন্তান লালনপালনে জাপানিদের নিয়ম সংগ্রহ করেছি, যা আমরাও সন্তান প্রতিপালনে তাদের নিয়ম অনুসরণ করতে পারি।

১) মা-সন্তানের নিবিড় সম্পর্ক: জাপানে একজন মা এবং সন্তানের বন্ধন সত্যিই দৃঢ়। তারা একসাথে ঘুমায় এবং মা যেখানেই যায় সেখানে সবসময় তাদের বাচ্চাদের সাথে করে নিয়ে যায়। মা-সন্তানের বন্ধন গভীরভাবে আবেগপূর্ণঃ মা তাদের সন্তানদের জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত থাকে এবং তাদের সন্তান তাদের চোখে পারফেক্ট।

chardike-ad

তাদের নিয়ম অনুসারে, তারা সন্তানের বয়স ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তারা যা চায় তা করতে দেয়। অন্যান্য দেশের মানুষেরা এটিকে অবাধ স্বাধীনতা এবং অতিরঞ্জিত বলে মনে করে, কিন্তু তাদের ধারনা ভুল। এই নীতি শিশুদেরকে ভালো মনে করতে সহায়তা করে।

২) জাপানি প্রতিপালনের সিস্টেম: সব মানুষকে সমানভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে। বিখ্যাত জাপানি প্রতিপালনের পদ্ধতি অনুসারে, শিশুরা ৫ বছর বয়সের আগে পারফেক্ট থাকে। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত দাসের মতো থাকে এবং ১৫ বছর বয়সে তাদের পিতামাতা এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের সমান বলে বিবেচনা করে। তবে, অনেক বিদেশীই এটা বুঝতে পারে না এবং  এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে।

এই দর্শনটি যৌথ সমাজের সদস্যদের মতামতের মাধ্যমে গৃহীত পদক্ষেপ, যেখানে ব্যক্তিগত স্বার্থকে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এটি এক ধরনের চাপ এবং জাপানী অভিভাবকরা তাদের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সক্ষম হন।

প্রথম পর্যায়ে, বাবা-মা তাদের সন্তানদের অগাধ প্রেম করবে এবং সন্তানদের প্রতি যত্নশীল হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে, তাদের ভালবাসা শেষ হয়ে যাবে না। একটি শিশু সমাজের নিয়ম অনুসারে জীবনযাপন করে এবং এই পৃথিবীতে তাদের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। যেহেতু মা-সন্তানের সম্পর্ক দৃঢ়, তাই একটি শিশু তার মায়ের মন ভালো করার জন্য সবকিছু করার চেষ্টা করে।  তৃতীয় পর্যায়ে, একটি শিশু সমাজের পূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠে।

৩) পরিবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের মধ্যে একটি: নিয়ম অনুসারে একজন মা তাদের সন্তানদের প্রতিপালন করে। তারা একসাথে অনেক সময় কাটায়। জাপানিরা মনে করে যে, শিশুদের ৩ বছর বয়সের আগে কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো উচিৎ নয়। তারা সাধারণত দাদা-দাদী বা নানা-নানীদেরকে বাচ্চা দেখাশুনা করতে বলে না এবং বেবিসিটার নেয় না।

কিন্তু সন্তানেরা দাদা-দাদী, নানা-নানী এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনদের সাথে অনেক সময় কাটায়। পরিবারের সদস্যদের সাথে তাদের সম্পর্ক সত্যিই আবেগপূর্ণ এবং যত্নশীল থাকে। পরিবারের সদস্যরা সবসময়ই একে অপরের পাশে থাকার জন্য প্রস্তুত থাকে এবং একে অপরকে রক্ষা করে।

৪) অভিভাবক আদর্শের ভূমিকা পালন করে: জাপান এবং ইউরোপের মায়েদের নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছিল। তাদেরকে একটি পিরামিড নির্মাণ করতে বলা হয়েছিল। জাপানি মায়েরা পিরামিড তৈরি করে এবং পরে তাদের সন্তানদের এটি পুনরাবৃত্তি করতে বলা হয়। শিশুরা যতবার এটি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তারা ততবার সেটি নতুন করে তৈরি করতে শুরু করে।

অন্যদিকে, ইউরোপীয় মায়েরা কিভাবে পিরামিড তৈরি করা হয় তা ব্যাখ্যা করে এবং সন্তানদেরকে সেটা তৈরি করতে বলে। জাপানের মায়েরা এই নিয়ম অনুসরণ করে, ‘আমি যেভাবে করেছি সেভাবে কর’। অন্যদিকে ইউরোপের মায়েরা তাদের সন্তানদের কিছু করার জন্য বলা হয় ঠিকই, কিন্তু উদাহরণ প্রদর্শন করে না

৫) আবেগের দিকে মনোযোগ দেওয়া: জাপানি মায়েরা তাদের সন্তানদের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখায়। তারা ছেলেমেয়েদেরকে কোন কিছুতে জোর করে না বা লজ্জিত বা বিব্রত অনুভব করতে দেয় না। তারা বাচ্চাদেরকে অন্য লোকেদের আবেগ, এমনকি অজানা বিষয়গুলো বুঝার জন্য শিক্ষা দেয়।

জাপানের মানুষেরা তাদের পদ্ধতিকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করে না। বর্তমানে, পশ্চিমাদের নীতি তাদের ঐতিহ্যে প্রভাবিত হচ্ছে। কিন্তু জাপানের প্রধান ধারনাগুলো, যেমন- শিশুদের প্রতি শান্ত ও প্রেমময় মনোভাব অপরিবর্তিত রয়েছে।

সৌজন্যে- ফাপরবাজ