শুক্রবার । ডিসেম্বর ১২, ২০২৫
বিজনেস ডেস্ক বিজনেস ৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ৪:৪৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিশ্বের কনিষ্ঠতম বিজনেস টাইকুন তিলক মেহতা

১৩ বছর বয়সে ১০০ কোটির মালিক!


Tilak Mehta 4

এই বিশাল উদ্যোগের বীজ রোপণ হয়েছিল এক সামান্য ঘটনা থেকে

মুম্বাইয়ের এক সাধারণ স্কুলছাত্র, যার বয়স মাত্র ১৩, সেই বয়সেই সে শুরু করল নিজস্ব ব্যবসা। আর মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সেই ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়ালো ১০০ কোটি টাকায়! এটি কোনো রূপকথার গল্প নয়, এটি হলো ভারতের কনিষ্ঠতম উদ্যোক্তা তিলক মেহতার অবিশ্বাস্য সাফল্যের কাহিনি।

যে বয়সে সহপাঠীরা স্কুলের পড়া আর পরীক্ষার নম্বর নিয়ে চিন্তিত থাকে, সেই সময়েই তিলক প্রবেশ করে ব্যবসার কঠিন দুনিয়ায়। নিজের বুদ্ধি আর উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিজনেসম্যান।

এই বিশাল উদ্যোগের বীজ রোপণ হয়েছিল এক সামান্য ঘটনা থেকে। একবার মামার বাড়ি থেকে ফেরার সময় তিলক খেয়াল করে তার জরুরি কিছু বই সেখানে ফেলে এসেছে। সামনেই সেই বিষয়ের পরীক্ষা। একাধিক কুরিয়ার সংস্থাকে অনুরোধ করেও সে দিনই বইগুলো ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এই অপেক্ষাই তাকে ভাবিয়ে তোলে। তিলক বুঝতে পারে মুম্বাই শহরে জরুরি জিনিসপত্র দ্রুত ও কম খরচে ডেলিভারির একটি বিশাল চাহিদা রয়েছে।

এই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘পেপার্স এন পার্সেল (পিএনপি)’ নামের ডিজিটাল কুরিয়ার সার্ভিস। ২০১৮ সালে মাত্র তিন মাসের মধ্যে এই স্টার্টআপটি শুরু করে তিলক।

Tilak Mehta 2

তিলকের এই সংস্থার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার ডেলিভারি মডেল। মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ‘ডাব্বাওয়ালা’দের কর্মতৎপরতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিলক তাদেরকেই এই পরিষেবার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বেছে নেয়। বাবার সামান্য অর্থসাহায্য নিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা।

পিএনপি’র লক্ষ্য ছিল—একদিনের মধ্যে মুম্বাই শহর ও শহরতলীতে কম খরচে (সর্বনিম্ন ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা) ৩ কেজি পর্যন্ত পার্সেল ডেলিভারি দেওয়া। বর্তমানে এই সংস্থায় ২০০-র বেশি নিয়মিত কর্মচারী এবং ৩০০-রও বেশি ডাব্বাওয়ালা যুক্ত আছেন। তারা দিনে প্রায় ১২০০-র বেশি পার্সেল ডেলিভারি দিয়ে থাকেন।

দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে তিলকের এই উদ্যোগ। সাধারণ মানুষের কাছে কম খরচে দ্রুত পার্সেল পাঠানোর সুযোগ এনে দেওয়ায় পিএনপি অল্প সময়ের মধ্যেই লাভের মুখ দেখে।

২০২০ সালের মধ্যেই তিলকের কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ১০০ কোটি টাকায় পৌঁছায়। ২০২১ সাল নাগাদ এই কনিষ্ঠতম উদ্যোক্তা মোট সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৫ কোটি টাকা। বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় ২ কোটি টাকা।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করা এই বিস্ময় বালক তিলক মেহতা ২০১৮ সালে ‘ইয়াং এন্টারপ্রেনার টাইটেল অ্যাট দ্য ইন্ডিয়ান মেরিটাইম অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ‘গ্লোবাল চাইল্ড প্রোডিজি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেন।

বয়স যে শুধু একটি সংখ্যা, এই সফল উদ্যোক্তা তার জীবন দিয়েই তা প্রমাণ করলেন। তিনি শুধু অর্থ উপার্জন করেননি, ৫০০-র বেশি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে অসংখ্য তরুণকে অনুপ্রাণিতও করেছেন।