চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ভবন নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রমাণ পেয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের নেতৃত্বে এই পাঁচ সদস্যের কমিটি তদন্তে করতে আসে। পরে তারা ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ ও ইটের খোয়ার পরিবর্তে সুরকি ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের দলের সঙ্গে আরো উপস্থিত ছিলেন- কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য নূরুল ইসলাম ওমর, গাইবান্ধা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম তানসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোশারফ হোসেন, সংসদ সচিবালয়ের উপ-সচিব মফিজুল ইসলাম, স্থাপত্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা আহম্মেদ বসির উদ্দিন, চুয়াডাঙ্গা গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকৌশলী অমিত কুমার দে।
তদন্তের পর কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন সংবাদিকদের বলেন, “চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় উদ্ভিদ সংগনিরোধ ভবন নিমার্ণে যে অনিয়ম হয়েছে তা বোঝা গেছে। এই নির্মাণাধীন ভবন সিলগালা করে বিশেজ্ঞদের দিয়ে ভবনের ভীতসহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি পরীক্ষা করা হবে।”
তিনি বলেন, “বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী কেমন তা আপনারা জানেন। উনারা দুর্নীতি ও অনিয়ম বরদাশত করেন না। দেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য যখন বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে ঠিক তখনই এ ধরনে দুর্নীতির ঘটনা ঘটলো।”
মকবুল হোসেন বলেন, “আমার বিশেজ্ঞ নই। তবে এ নির্মাণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম খতিয়ে দেখা হবে। যেহেতু এ বিষয়ে মামলা হয়েছে সেহেতু মামলার পর তদন্তের কাজটিও সেভাবে দেখা।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বাংলাদেশে ফাইটোসেনেটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের অধীনে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র, স্থলবন্দর, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা অফিস ভবন নির্মাণ কল্পে গত ১২/০৭/২০১৫ তারিখে ঠিকাদার নির্বাচনের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সমূহের দরপত্র মূল্যায়ন করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনাল ৬৪/এ মনিপুরী পাড়া তেজগাঁও ঢাকা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়।
প্রকল্প পরিচালকের স্মারক নং-ফাইটো-৪১/২০১৫ (অংশ)/৭৮৪ তারিখ ২৫/১০/২০১৫ মোতাবেক মেসার্স জয় ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয় (পরিশিষ্ট-১)। কাজের চুক্তিমূল্য ধার্য হয় দুই কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ২২৭ টাকা ২২ পয়সা। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত মতে চুক্তি সম্পাদনের দিন থেকে ১২ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা। এ নির্মাণ কাজের ডিজাইন, স্থাপত্য নকশা, কাঠামোগত ডিজাইন তৈরী ও নির্মাণ চলাকালীন সকল প্রকার কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স কনসোর্টিয়াম লি: (ইসিএল) ৮৭০ শেওড়াপাড়া, মিরপুর, ঢাকা নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যথাযথ নিয়মপদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগ প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের সকল প্রকার ক্রয় কার্যক্রমে প্রকল্প পরিচালককে সহায়তা করার জন্য মো: আয়ুব হোসেনকে এই প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এছাড়া কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইংয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও আইসিটি ব্যবস্থাপনা শাখার পক্ষ থেকে উক্ত নির্মাণ কাজটি দেখাশুনার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নির্মাণ কাজটি গত ০৫/১১/২০১৫ তারিখে শুরু হয়ে ইতিমধ্যেই নির্মাণ কাজের মূল ভবনসহ ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ অবস্থায় বিগত ৬/০৪/২০১৬ তারিখে নির্মাণাধীণ উক্ত ভবনের সম্মুখ অংশে ডিজাইন উপেক্ষা করে অনুমোদিত রডের পরিবর্তে বাঁশের কাবারী ও ইটের খোয়ার পরিবর্তে সুরকি ব্যবহারের বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ায় তারা ঘটনাটি তুলে ধরেন।
এ দুর্নীতি ও অনিয়নের ঘটনার পর্যায়ক্রমে শুক্রবার বেলা ১১টায় কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্ত দল দর্শনায় আসে। এ সংক্রান্ত ব্যাপারে দামুড়হুদা মডেল থানার মামলা হওয়ার পর মামলাটি দুদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে দুদক মামলটি তদন্ত করছে।