Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

নিহতদের দুজন বাংলাদেশি, অন্যরা বিদেশি নাগরিক

gulsan 2গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ২০ জনের মধ্যে কমপক্ষে ২ জন বাংলাদেশি ও ১ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। তবে গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে সরকারিভাবে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সূত্রগুলো বলছে, নিহত বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ৯ জন ইতালির, ৭ জন জাপানের ও ১ জন ভারতের।

নিহত ব্যক্তিদের লাশ এখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আছে। এর আগে বেলা একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ওই কলেজের ফরেনসিক মেডিসিনের চিকিৎসকেরা নিহত ২ পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল করিম ও সালাউদ্দিন খানের ময়নাতদন্ত করেন। এর বাইরে রেস্তোরাঁয় থাকা মৃতদেহগুলো বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে যাওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত সিএমএইচে করার নির্দেশ দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের একটি দল সিএমএইচে যায়। কিন্তু রাত ১০টা পর্যন্ত শনাক্ত করা ও সুরতহালের কাজ শেষ না হওয়ায় তাঁরা ফিরে আসেন। সব মরদেহ সিএমএইচে আছে। ময়নাতদন্তের পর লাশ স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
ওই দলের একজন সদস্য ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রেস্তোরাঁয় থাকা মানুষগুলোকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নারীদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে।

chardike-ad

নিহত দুই বাংলাদেশি হলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন, বিজিএমইএ ও জেডএক্সওয়াইয়ের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ল্যাভেন্ডার গ্রুপের মালিক মনজুর মোরশেদের নাতনি অবিন্তা কবীর।
ফারাজ আইয়াজ হোসেন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসকেএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সিমিন হোসেন ও ওয়াকার বিন হোসেন দম্পতির ছোট ছেলে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ গত ১৯ মে গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে আসেন।

নিহত অবিন্তা কবীর লস অ্যাঞ্জেলেসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। ল্যাভেন্ডার গ্রুপের চেয়ারম্যান রওশন মোরশেদ ও মনজুর মোরশেদ দম্পতির নাতনি অবিন্তাও ছুটি কাটাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ল্যাভেন্ডার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলিগ্যান্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অবিন্তা দেশে আসেন গত ২৭ জুন। শুক্রবার রাত আটটার পর থেকে তাঁর সঙ্গে স্বজনেরা আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয় ফায়াজ ও অবিন্তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করেছে।

জেডএক্সওয়াইয়ের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক ইশরাত আখন্দ বাংলাদেশের শিল্পবোদ্ধাদের কাছে প্রিয় নাম। ইশরাতের মৃত্যুর পর তাঁর এক বন্ধু ফেসবুকে বলেছেন, ‘এই ছিলেন ইশরাত। ফুল অফ লাইফ, মাথা খারাপ, হাসিখুশি, আর্ট পাগল, ফুড পাগল, র্যানডম, একসেনট্রিক একটা মেয়ে।’
সরকারিভাবে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এই হামলায় তারুশি জৈন নামে এক ভারতীয় নারীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। সুষমা তারুশির বাবা সঞ্জীব জৈনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তারুশি ছুটিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে ঢাকায় আসেন। তাঁর বাবা কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন।

এএফপির খবরে বলা হয়, গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ইতালির ৯ জন নিহত হয়েছেন। আর নিখোঁজ ১ জন। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাওলো জেন্তিলোনি গতকাল বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫ জন নারী ও ৪ জন পুরুষ। তাঁদের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। জেন্তিলোনি আরও বলেন, হামলার সময় ওই রেস্তোরাঁয় আরেক ইতালীয় উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি নিহত হননি। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিহত ৯ ইতালীয় নাগরিকের নাম প্রকাশ করেছে। তাঁরা হলেন আদেলে পুলিজি, মার্কো তোন্দাৎ, ক্লাউদিয়া দান্তোনা, নাদিয়া বেনেদিত্তি, ভিনচেনসো দালেস্ত্রো, মারিয়া রিবোলি, ক্রিস্তিয়ান রসি, ক্লাউদিয় কাপেল্লি এবং সিমোনা মন্তি। ইতালির সংবাদপত্র লা রেপুবলিকার অনলাইনে তাঁদের নয়জনের ছবি প্রকাশ করেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নাদিয়া বেনেদিত্তি বাংলাদেশে প্রায় ২৮ বছর ধরে ছিলেন। ঢাকায় তাঁর বাড়িও আছে।
ইতালি থেকে একটি বিশেষ প্লেন বাংলাদেশের দিকে রওনা দিয়েছে বলে বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে।
জাপানের চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা জিম্মি ৭ জাপানি নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশে জাইকার অর্থায়নে চলমান একটি প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁরা।

নিহত জাপানিরা হলেন, তানাকা হিরোশি, সাকাই ইউকু, কুরুসাকি নুবুহিরি, ওকামুরা মাকাতো, শিমুধুইরা রুই, হাসিমাতো হিদেকো ও কোয়ো ওগাসাওয়ারা।
আহত ৪২ জন: হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৪২ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জন ওই রেস্তোরাঁয় ছিলেন। তাঁরা হলেন শ্রীলঙ্কার নাগরিক হানিকেস ও সামা, জাপানের কামারা ওয়াতানাবে ও র্যাব-১-এর অধিনায়ক তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। তাঁরা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। মাসুদের পায়ে অস্ত্রোপচার করে চারটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে। তিনি অভিযানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন।

এ ছাড়া ৩৮ জনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। আহত ব্যক্তিদের ৩৫ জন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ সদস্য সুজন কুমার ও হলি আর্টিজানের কর্মী জাকিউর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন। ৩৫ জনের দেহে গুলি ও বোমার স্প্লিন্টার আছে বলে জানিয়েছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ কর্মকর্তা শাগুফা আনোয়ার। অভিযান শেষে শ্রীলঙ্কা ও জাপানের ৩ নাগরিককে সিএমএইচে নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশের ২ কনস্টেবল আলমগীর ও প্রদীপ এবং গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাকের অবস্থা স্থিতিশীল আছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এখন পর্যন্ত কতজন নিখোঁজ আছেন, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ময়না বেগম নামের এক নারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই এই হোটেলে পিজা বানাত। তারে খুঁইজা পাইতেছি না। যে নম্বরে খোঁজ নিতে বলছে, সেই নম্বরে ফোন কইরাও কিছু জানতে পারি নাই।’ রেস্তোরাঁর ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শাখার ক্যাপ্টেন সুমন রেজা বলেন, ‘রেস্তোরাঁয় যাঁরা কাজ করতেন তাঁদের অনেককেই খুঁজে পাচ্ছি না। হয় তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জিম্মায় আছেন। কিন্তু আমরা যোগাযোগ করতে পারছি না।’ প্রথমআলো।