Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

ডিমের হালি ১২ টাকা!

eggডিমের হালি ১২ টাকা! প্রতিপিস ৩ টাকা! তবুও মিলছে না ক্রেতা! এ যেন শায়েস্তা খাঁর আমল। গ্রামের এখানে-সেখানে ডিমের স্তূপ। অপেক্ষা ক্রেতার। তবে উত্পাদন বেড়ে যাওয়ায় ভাটা পড়েছে পাইকারি বাজারে। ডিম নিয়ে বিপাকে খামারিরা। অবিশ্বাস্য মনে হলেও কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিভিন্ন লেয়ার খামারে গিয়ে এমন অবস্থাই দেখা গেছে। পানির দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগির ডিম।

পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা গ্রামের প্রবাস-ফেরত যুবক নূরুজ্জামান বাবু। কয়েক বছর ধরে নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন লেয়ার মুরগির খামার। এতে লাভও আসছিল ভালো। কিন্তু হঠাত্ করেই যেন তার মন উঠে যায় খামার থেকে। তার খামারে ১৫ হাজার মুরগি। ডিমের দাম পড়ে যাওয়ায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। ডিমের দাম পড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাকে। তাই খামারের দিকে খুব একটা খেয়াল নেই।

chardike-ad

কর্মচারীরা খামার পরিচর্যা করছিলেন। বাবু জানান, একদিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে, অপরদিকে কমছে ডিমের দাম। গতকাল পর্যন্ত ১০০ ডিম বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৯০ টাকায়। প্রতি হালির ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকার চেয়েও কম। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তার খামারে ১২ হাজার টাকা করে লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি ডিম উত্পাদনে খরচ পড়ে ৫ টাকা।

অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ টাকায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘরবাড়ি বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামের মো. শামসুদ্দিন এবার নতুন খামার দিয়েছেন। তার খামারে ১২০০ মুরগি। এখন পর্যন্ত খামারে তার খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। কিন্তু ডিম বিক্রি করতে পেরেছেন মাত্র ৩০ হাজার টাকা। উত্পাদনের শুরুতেই তিনি লোকসানের মুখে পড়েছেন। কত টাকা লোকসান গুনতে হবে এ চিন্তায় অস্থির কৃষক শামসুদ্দিন।

একই এলাকার সোহেল মিয়া খামারে তিনটি শেডে ৫ হাজার মুরগি পালন করছেন। অনেক দিন ধরেই তিনি লেয়ার মুরগি পালন করে আসছেন। গত বছরও ডিম বিক্রি করে তার লাভ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। কিন্তু এবারের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। সোহেল মিয়া বলেন, এক বস্তা খাবার কিনতে হচ্ছে ১৬৬৫ টাকায়। আর ১০০ ডিমের দাম ৩০০ টাকা। ডিমের দাম কম হলেও মুরগিকে তো আর খাবার কম দেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে ১২ হাজার টাকা। হঠাত্ করে ডিমের দাম কমে যাওয়ায় ডিম ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে বলে মনে করেন তিনি। সোহেল মিয়া জানান, এবার তার ১৫ লাখ টাকা লোকসান হবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

পাকুন্দিয়া ছাড়াও কিশোরগঞ্জের অন্যান্য উপজেলায়ও ডিমের পাইকারি বাজারে ধস নেমেছে। একদিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে, অপরদিকে কমছে ডিমের দাম। এতে লোকসানের মুখে পড়ছেন খামারিরা। এদিকে খামার থেকে নামমাত্র মূল্যে ডিম বিক্রি হলেও বাজার থেকে ডিম কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। খামারিরা জানান, লেয়ার মুরগির খাবারের দাম বাড়ছে। আর কমছে ডিমের দাম। এ অবস্থায় প্রতিদিন লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ডিম যেন খামারিদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এদিকে খামার থেকে পানির দামে বিক্রি হলেও বাজার থেকে সাধারণ মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে ২৫ টাকা হালি।

ডিম ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে এমনি হচ্ছে বলে মনে করছে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী জানান, ব্যবসায়ীরা খামার থেকে কম দামে ডিম কিনলেও কয়েক হাত ঘুরে খুচরা বাজারে মানুষকে ডিম কিনতে হচ্ছে ডাবল দামে। এটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাজ। এতে করে লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। সরাসরি বাজারে ডিম বিক্রি করার সুযোগ পেলে প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হবেন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে লেয়ার মুরগির খামার রয়েছে প্রায় ২০ হাজার। এসব খামারে প্রতিবছর উত্পাদন হয় ৭০ কোটি ডিম। আর এ জেলায় ডিমের চাহিদা রয়েছে বছরে ৩১ কোটি। বাকি ডিম অন্যান্য জেলায় পাঠানো হয়। এসব খামারে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। জেলার সম্ভাবনাময় এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে মুরগির খাবারের দাম কমিয়ে ডিমের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি খামারিদের।