Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

বাংলাদেশিরা যেভাবে পাবেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব

Australiaবিশ্বের চারদিকে যখন চলছে অশান্তি, তখন পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে অস্ট্রেলিয়া। সমৃদ্ধ অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসম্মত আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা—সব মিলিয়ে বসবাসের জন্য চমৎকার একটি দেশ অস্ট্রেলিয়া। তাই দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করার স্বপ্ন অনেকেরই।

শরীর জুড়ানো আলো-হাওয়া আর হাজারো দ্বীপের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা অবারিত প্রকৃতি ক্ষুদ্রতম এই মহাদেশকে যেমন অতুলনীয় রূপের অধিকারী করে তুলেছে, তেমনি সামাজিক নিরাপত্তা আর উন্নত জীবনমান বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম এই দেশটিকে বসিয়ে দিয়েছে অভিবাসন আকর্ষণের কেন্দ্রে। প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ২ লাখ ভিসার আবেদন আসে দেশটিতে।

chardike-ad

তাই ৫০ হাজার বছর ধরে চলে আসা অভিবাসনের ইতিহাস নতুন মোড় নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর গ্রেট বেরিয়ার রিফ এর দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। ভারত মহাসাগর, তিমুর, আরাফুরা, তাসমান ও প্রবাল সাগর এবং টরেস ও ব্যস প্রণালীর বেড়ে শান্তির সওদা নিয়ে শুয়ে থাকা দেশটিতে এখন বাংলাদেশিদের জন্য স্থায়ী বসবাসের আরো সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সঠিক নিয়ম মেনে বিশ্বের যেকোনো জাতি-ধর্মের মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় পেতে পারেন স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ। কিন্তু অনেকেই এ বিষয়ে সঠিক তথ্য না পেয়ে পা বাড়াচ্ছেন ভুল পথে। সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন না করা ও সঠিক প্রোগ্রাম নির্ধারণ করতে না পারায় বাংলাদেশি নাগরিকদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। সঠিকভাবে মাইগ্রেশন আইন অনুসরণ করে আবেদন করলে বাংলাদেশি নাগরিকরাও পেতে পারেন অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ।

সম্প্রতি দেশটিতে জনপ্রিয় কর্মদক্ষতা ভিত্তিক সাব-ক্লাস ৪৫৭ ভিসা বাতিল ও নাগরিকত্ব প্রদানের নতুন আইন নিয়ে চলছে নানা শঙ্কা ও সমালোচনা। সাব-ক্লাস ৪৫৭ এ আবেদন করার আর সুযোগ নেই বলে অনেকেই আশাহত হয়ে পড়েছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুন স্কিম চালু করেছে।

আগ্রহীদের সুবিধার জন্য নতুন প্রোগ্রামে অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। আপনি আপনার সামর্থ ও পরিকল্পনা বুঝে এর যে কোনো একটির মাধ্যমে স্থায়ী হয়ে যেতে পারেন ক্যাঙ্গারু আর ক্রিকেটের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়।

স্কিলড ইন্ডিপেন্ডেন্ট (মাইগ্র্যান্ট) ভিসা সাব ক্লাস ১৭৫: অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী সংখ্যা দিন দিন অনেক বেড়ে যাচ্ছে। মূলত দক্ষ শ্রমিকরাই উন্নত জীবন যাপনের উদ্দেশে দেশটিতে পাড়ি জমায়। এর বাইরেও অনেকভাবেই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে কমন হলো সাব ক্লাস ১৭৫ ।

এ প্রক্রিয়ায় যদি কোনো স্পন্সর নাও থাকে, শুধু যোগ্যতা বা স্কিল যদি অস্ট্রেলিয়া সরকার ঘোষিত লিস্টের সাথে মেলে, বয়স ২৫-৫০ এর মধ্যে হয় এবং ইংরেজিতে দক্ষতা থাকে তাহলে সহজেই অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হওয়া সম্ভব।

অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্বের রয়েছে তিনটি ধাপ। প্রথমটি টিআর বা টেমপোরারি রেসিডেন্সি। দ্বিতীয়টি পিআর বা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি এবং শেষ ধাপে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে যারা থাকেন তারা ভোটাধিকার ও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।

বাংলাদেশি ভিসাপ্রত্যাশীরা খুব সহজেই সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হয়ে কাজ ও দক্ষতা প্রমাণের মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করলে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় কাজ ও বসবাস করার সুযোগ পেতে পারেন।

ইনডিপেনডেন্ট ভিসা:
• সাব-ক্লাস ১৯০- স্টেট নমিনেটেড ভিসা।
• সাব-ক্লাস ৪৮৯- রিজিওনাল sponsored ভিসা।
• সাব-ক্লাস ৪৮৫- অস্থায়ী গ্র্যাজুয়েট ভিসা।

এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত সহজ ক্যাটাগরিগুলো হচ্ছে :
• সাব-ক্লাস ৪৫৭-চাকরিদাতা কর্তৃক sponsored অস্থায়ী ভিসা।
• সাব-ক্লাস ১৮৬- চাকরিদাতা কর্তৃক sponsored স্থায়ী ভিসা।
• সাব-ক্লাস ৪০২-ট্রেনিং এবং গবেষণার জন্য ভিসা।
• সাব-ক্লাস ৪৬১ নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের জন্য।

পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী ভিসা মাত্র ১২ মাসে: সাব-ক্লাস ১৮৬, ১৮৯, ১৯০ এবং ৪৮৯-এর অধীনে যে কোনো বিদেশি নাগরিক এখন মাত্র ১২ মাসে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারছেন।

এই প্রোগ্রামের কিছু সুবিধা রয়েছে। এগুলো হলো- এর জন্য দেশ থেকে কোনো চাকরির অফার নিয়ে যেতে হবে না। সন্তানরা বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে, পরিবারের সদস্যরা বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া ১৬৯টি উন্নত দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করার সুবিধা পাওয়া যাবে। রয়েছে সবচেয়ে কম খরচে এবং কম সময়ে স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ, কোনো কোটা বা নির্ধারিত সংখ্যা নেই। যে কোনো সময় স্টেট গভ:মেন্ট নমিনেশনের জন্য আবেদন করা যায় এবং পরিবারের নির্ভরশীল সদস্যদের জন্য সরকারি খরচে সবচেয়ে কম টাকায় পিআর প্রসেস করা যায়।

পেশা: প্রকৌশলী, চিকিৎসক, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী, অ্যাকাউনটেন্ট, অডিটর, স্থপতি, ডেনটিস্ট, ফার্মাসিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ব্যাংকার, রেডিওলজিস্ট, নার্স, সনোগ্রাফার, প্যাথোলজিস্ট, সার্ভেয়ার, মিডওয়াইফ, শিক্ষক ইত্যাদি পেশার লোকজন নিজ নিজ ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন।

এই প্রোগ্রামে আবেদন করার জন্য ন্যূনতম যে যোগ্যতা থাকতে হবে তা হলো:

বয়সসীমা: অস্ট্রেলিয়া স্কিলড প্রোগ্রামে আবেদন করার জন্য প্রার্থীর বয়স অবশ্যই ৫৫ বছরের নিচে হতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) সাবমিট করতে হবে। পরে ইনভাইটেশন এলে মূল আবেদন জমা দিতে হবে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা: চার বছরের অনার্স এবং এক বছরের মাস্টার্স অথবা তিন বছরের অনার্স এবং দুই বছরের মাস্টার্স ডিগ্রিধারীরা আবেদন করতে পারবেন।

কাজের অভিজ্ঞতা: প্রথমে মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়ার বাইরের যে কোনো ডিগ্রিকে অস্ট্রেলিয়ার সমমানের করার জন্য প্রার্থীকে ওই একই ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।

ইংরেজি জ্ঞান: প্রার্থীকে অবশ্যই আইইএলটিএস (সাধারণ বা একাডেমিক)-এর প্রতিটি মডিউলে আলাদা আলাদা করে ৬.০+ স্কোর করতে হবে। কোনো প্রার্থী যদি প্রতিটি মডিউলে আলাদা আলাদা করে ৭.০+ স্কোর করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে তিনি আবেদন করার সঙ্গে আরো ১০ পয়েন্ট পাবেন।

তাসমেনিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস: তাসমেনিয়া রাজ্যের মাধ্যমে মনোনীত হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ীভাবে এসে স্থায়ীভাবে বসবাসের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এই সুযোগ অস্ট্রেলিয়ায় ইতিমধ্যে যারা বসবাস করছিলেন তাদের জন্যই শুধু প্রযোজ্য ছিল।

মনোনীত ভিসাধারীরা তাসমেনিয়া রাজ্যের যে কোনো জায়গায় বসবাস ও কাজ করতে পারবেন। ভিসা শ্রেণি ৪৮৯-র আওতায় অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূলীয় দ্বীপরাজ্য তাসমেনিয়া নতুন করে এ ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে।

নতুন এই ভিসার মাধ্যমে চার বছর মেয়াদে তাসমেনিয়ায় বসবাস ও কাজের সুযোগ পাবেন বিদেশি আবেদনকারীরা। দুই বছর বসবাস ও এক বছর কাজ করার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ঘোষণা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে।