Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

লাথি চিকিৎসা!

natore-newsতেল, পানি পড়া, ফু আর লাথি দিয়ে প্যারালাইসিস, পুরাতন গ্যাস্ট্রিক, চোখের সমস্যা, পেট ব্যাথা থেকে শুরু করে দূরারোগ্য রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী কথিত এক কিশোর কবিরাজ। মাত্র ২০ টাকা নিয়ে হাজির হলেই সব ধরনের ব্যাথা ও দূরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে দাবি ওই কিশোরের মা মমতাজ বেগমের।

তবে বিশেষ কোনো গোপন রোগ থেকে মুক্তি পেতে ১শ টাকা থেকে ৫শ টাকা দিতে হয়। আর তেল ও পানি পড়া নিতে প্রতিদিন শত শত নারী-বৃদ্ধ ও শিশু মনির হোসেন নামের ওই প্রতিবন্ধী কিশোর কবিরাজের বাড়িতে ভিড় করছে।

chardike-ad

কিশোর কবিরাজের আস্তানা ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতারকচক্রের সদস্যরা বলছে, এই তেল মালিশ ও পানি খেলে পুরাতন গ্যাস্ট্রিক, চোখের সমস্যা, পেট ব্যাথা, মাথার যন্ত্রণা, হার্টের সমস্যা, মেয়েদের জটিল সমস্যা, প্যারালাইসিসসহ সব ধরনের জটিল রোগ ভালো হয়। গত ৫ মাসে অসংখ্য রোগী ভালো হয়েছে। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এখানে প্রতিদিন শত শত রোগী আসছে। বিশেষ করে গত কয়েক মাসে ৪ জন নারী গর্ভ ধারণের ক্ষমতা লাভ করেছে। যদিও ঠিক কোন রোগীটির রোগ ভালো হয়েছে কেউ তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।

নাটোরের সিংড়া উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের কৃষক আশরাফ আলীর তিন সন্তান। ২ মেয়ে ও ১ ছেলের মধ্যে মনির হোসেন (১২) ছোট। জন্মগত ভাবে মনির হোসেন শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী। হঠাৎ গত রমজানের পর এক রোগীকে সে বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে ওষুধ তুলে দেয়। এবং পরে সে সুস্থ হয়ে যায়। এরপর তার নিজের বড় আম্মা রাবেয়া বেগম বিয়ের ১২ বছর পর তার ছোয়ায় সন্তান গর্ভ ধারণের ক্ষমতা লাভ করেছে বলে প্রতারকচক্রের সদস্যদের দাবি।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী কিশোর কবিরাজের বাড়িতে অসংখ্য রোগীর ভিড়। বেশির ভাগ রোগীই নারী ও শিশু। প্রতিবন্ধী কবিরাজ মনির হোসেন বাড়ির আঙিনায় মাটিমাখা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তখনও কবিরাজের গোসল ও খাওয়া হয়নি। তাই আগত রোগীদের অপেক্ষার পালা।

এদিকে কবিরাজের মা মমতাজ বেগমের কথা, চিকিৎসা নিতে হলে সকলকে বসতে হবে। কেউ তাড়াহুড়া করলে কিন্তু চিকিৎসা দেয়া যাবে না। অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে হঠাৎ করেই আস্তানায় না বসেই বাড়ির আঙিনায় শুরু হয়ে গেলে প্রতিবন্ধী কবিরাজের চিকিৎসা। আগত রোগীদের উদ্দেশ্যে, কবিরাজের মায়ের ভাষ্য ২০ টাকা দেন, আরো দু’বার কিন্তু আসতে হবে, একবার এলে রোগ ভালো হবে না। শুরু হয়ে গেল, পেটের ও চোখের সমস্যার জন্য ফু দেয়া আর কোমর-পায়ে বাত ব্যাথার জন্য লাথি ও তেল-পানি পড়া দেয়া। যারা তেল-পানি আনেননি তাদের জন্যও রয়েছে টাকার বিনিময়ে বিশেষ ব্যবস্থা। তাছাড়া গোপন রোগের জন্য রয়েছে ঘরের ভিতরে বিশেষ ভাবে চিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা।

কবিরাজের বাড়ির সঙ্গেই নাগর নদে নৌকা পারাপারে ব্যস্ত মাঝি আলম হোসেন বলেন, প্রতিদিনই শত শত লোক তার নৌকায় পার হয়ে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। এই কবিরাজের ঝাড়-ফুকে রোগ ভালো হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যতই দিন যাচ্ছে রোগীদের ভিড় বাড়ছে। আর আমারও আয় অনেক বেড়ে গেছে। এতটুকু আমি জানি, এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।

এদিকে ছোট শিশুদের চিকিৎসায় শিশুদের ভয়-ভীতি ও চড়-থাপ্পড় দিতেও দেখা যায় ওই প্রতিবন্ধী কবিরাজ এবং তার মা মমতাজ বেগমকে। আর এই প্রতারকচক্রের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই তার শিশুকে চিকিৎসার নামে মানষিক নির্যাতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

নাটোর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী কিশোরের ‘ফু’ চিকিৎসা একটি অপচিকিৎসা। এটাকে মানুষ বিশ্বাস করে এর পিছনে দৌড়াচ্ছেন। এটা একটা নিছুক প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ মেডিকেল সাইন্সে ফু দিয়ে কোনো চিকিৎসা হয় না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ মাহমুদ জানান, বর্তমান সময় এ ধরনের অপচিকিৎসা একটি দুঃখজনক বিষয়। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।