Search
Close this search box.
Search
Close this search box.

মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তারা যখন নিজেরাই মাতাল

drug-titleনিজেরা মদ খেয়ে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুই সন্দেহভাজনকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন একজন সেপাই ও একজন সোর্স (তথ্যদাতা)। থানায় তাঁদের মাতলামিতে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে পুলিশ তাঁদের আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের খবর দেয়। কর্মকর্তারা তাঁদের সহকর্মীদের মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও ওই সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রাতে খুলনার বটিয়াঘাটা থানায়। কর্তব্য পালনের সময় মদ খাওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত দুজন হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খুলনার উপপরিদর্শক (এসআই) মনোজিৎ কুমার বিশ্বাস ও গোয়েন্দা শাখার সেপাই মো. সেলিম।

chardike-ad

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় সংস্থাটির মাদকবিরোধী তথ্য অভিযান শুরুর তিন দিন আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া গেল। মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ) আতিকুল হক গতকাল বলেন, ‘বিকেলে আমাদের কাছে খবরটি এসেছে। আমরা বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছি।’

এর আগে দুপুরে ঢাকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে জানানো হয়, এসআই মনোজিৎ ও সেপাই সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি সংস্থাটির মহাপরিচালক পর্যন্ত গড়িয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোমবারের ঘটনার বিষয়ে বটিয়াঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, ১৫০ গ্রাম গাঁজাসহ দুজন আসামি নিয়ে গত সোমবার রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণের এসআই মনোজিৎ কুমার থানায় আসেন মামলা করতে। মামলা নেওয়ার সময় বাংলা মদের গন্ধ পান ওসি।

ওসি বলেন, ‘মদের গন্ধ পেয়ে আমি এসআই মনোজিৎকে বললাম, ধরছেন গাঁজা আর বাংলা মদের গন্ধ বের হচ্ছে। বাংলা মদ আবার খাইল কে? তখন এসআই মনোজিৎ “সরি স্যার, সরি স্যার” বলা শুরু করে। আমি বললাম, আপনি যদি (মদ) খেয়ে থাকেন, তবে আপনি এখানে আসছেন কেন? পরে বাইরে গিয়ে দেখলাম তাঁদের সঙ্গে আসা একজন সেপাই দাঁড়ানো। তাঁর মুখ থেকেও মদের গন্ধ আসছে। এরপর দেখি আমার পুলিশের সঙ্গে একজন তর্কাতর্কি করছে, মাতলামো করছে। জানতে পারলাম, সে তাঁদের সোর্স সুশীল বিশ্বাস। পরে তিনজনকে বসিয়ে রেখে তাঁদের কর্তৃপক্ষকে জানালাম।’

পুলিশ জানায়, পরে এসআই মনোজিৎ, সেপাই সেলিম ও তাঁদের সোর্স সুশীলকে হাসপাতালে নিয়ে ‘স্টমাক ওয়াশ’ করানো হয়। হাসপাতালের দেওয়া সনদের ভিত্তিতে সোর্সের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। খবর পেয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জেলা কর্মকর্তারা থানায় আসেন। তাঁরা তাঁদের দুই সহকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশকে জানান। এরপর আটক এসআই ও সেপাইয়ের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের জিম্মায় দেওয়া হয়। মুচলেকায় তাঁরা উল্লেখ করেন, তাঁরা মদ খেয়েছিলেন, এরপরে আর কোনো দিন এমন করবেন না।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক রাসেদ উজ জামান বলেন, ‘গাঁজাসহ আসামিদের নিয়ে থানায় মামলা দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। মাদক সেবন করে থানায় গিয়ে তাঁরা অস্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন। পরে আমাদের একজন পরিদর্শক আহসান হাবিব মুচলেকা দিয়ে তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। ডাক্তারি পরীক্ষায় অ্যালকোহল জাতীয় কোনো কিছু পান করার সত্যতা পাওয়া যায়। আমরা গত বুধবার সেই ডাক্তারি প্রতিবেদনসহ তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে সুপারিশ করেছি।’

মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছে সংস্থাটি। ২৮ জন মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সঠিকভাবে তাঁদের কাজ না করায় এবং অভিযোগ থাকায় তাঁদের কারণ দর্শানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় সংবাদ সম্মেলন করে সংস্থাটি মাদকবিরোধী তথ্য অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়। ঢাকার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক জামাল উদ্দীন আহমেদ নিজের সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেউ মাদকে জড়ালে চাকরি থাকবে না।

অবশ্য এর আগে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরেও তাঁরা নানাভাবে পার পেয়ে গেছেন। ২০১৬ সালের মার্চে টেকনাফে মাদক নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়ের তালা ভেঙে আলামত হিসেবে আলমারিতে থাকা ১ লাখ ৮১ হাজার ইয়াবা ও ২ কেজি গাঁজা চুরি হয়ে যায়। সে ঘটনারও এখনো সুরাহা হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই।

প্রথম আলো এর সৌজন্যে