শনিবার । ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ২১ জুলাই ২০২৫, ৯:৫০ অপরাহ্ন
শেয়ার

বিমান বিধ্বস্তে নিহত পাইলট তৌকিরের পরিচয়


towkirউত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ ক্যাম্পাসে এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাহসী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি জীবন উৎসর্গ করেছেন— রেখে গেছেন এক বীরত্বগাথা, এক গভীর শোক।

পাইলট তৌকিরের বাড়ি রাজশাহী উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে। তিনি তোহরুল ইসলাম এবং সালেহা খাতুন দম্পতির সন্তান। পরিবারের একমাত্র পুত্র হিসেবে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ও দায়িত্ববান ছিলেন তিনি। শৈশবেই তার স্বপ্ন ছিল দেশের জন্য কিছু করার, সেই স্বপ্ন থেকেই তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। কঠোর প্রশিক্ষণ আর আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা সাগর দেশের আকাশ সীমা রক্ষায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।

মাত্র ছয় মাস আগে রাজশাহীতেই বিয়ে করেন তিনি। নতুন জীবনের শুরুতেই এমন মর্মান্তিক বিদায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের ভেঙে দিয়েছে।

সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। বিমানের ককপিট থেকে বের হওয়ার আগেই ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর।

তার মৃত্যুর খবরে রাজশাহীর উপশহরে তার বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। পরিবারের সদস্যদের একমাত্র ভরসা ছিল সাগরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ—তা এক নিমিষেই নিভে গেল।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয় রাজশাহীতে। ওই হেলিকপ্টারে সাগরের বাবা তোহরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন বৃষ্টি ঢাকায় পৌঁছান। সেখানে তারা ছুটে যান ছেলের নিথর দেহ দেখতে।

তৌকিরের মেজ চাচা মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না সাগর আর আমাদের মাঝে নেই। কয়েকদিন আগেই সে বাড়ি এসেছিল, হাসিখুশি ছেলেটা… মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করল, সব কিছুই যেন স্বপ্নের মতো ভেঙে গেল।’

বাংলাদেশ হারাল এক সাহসী পাইলটকে, আর রাজশাহীর উপশহরের এক পরিবার হারাল তাদের সন্তান, ভাই ও স্বপ্নের মানুষটিকে। তৌকির ইসলামের আত্মত্যাগ দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা হিসেবে চিরভাসমান থাকবে।