শনিবার । ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক জাতীয় ২১ জুলাই ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন
শেয়ার

শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে জীবন বাজি রাখলেন মাহরিন


mahrinসকালের মতোই স্বাভাবিক ছিল দিনটি। শিশুরা ক্লাস করেছে, টিফিন খেয়েছে, ছুটির অপেক্ষায় ছিল। ঠিক তখনই, হঠাৎ বিকট শব্দ। মুহূর্তেই আকাশ কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান।

বিস্ফোরণের পর স্কুলের অভ্যন্তরে আগুনের ফুলকি, ভাঙা দেয়াল, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ—সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক দৃশ্য। আর সেই ভয়াবহ সময়েও, নিজের জীবন বাজি রেখে শিশুদের রক্ষা করেন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর চোখে এখনও ভাসছে সেই বিভীষিকাময় দৃশ্য। উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম খান জানান, “আমি ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট একটি শব্দ পাই। সামনে তাকিয়ে দেখি চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। কাছে যেতেই দেখি, কয়েকজন এতটাই পুড়ে গেছে যে চিনে ওঠা সম্ভব নয়। একটি কক্ষে দেখি এক ম্যাম কয়েকজন শিশুকে বুকে জড়িয়ে আগুনের মধ্যেই দাঁড়িয়ে আছেন। শিশুরা তুলনামূলকভাবে অক্ষত থাকলেও ম্যামের শরীর ভয়াবহভাবে পুড়ে গেছে। আমি দুজন ছোট মেয়েকে নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাই। পরে শুনি, ম্যামকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

এই সাহসী শিক্ষিকার নাম মাহরিন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

মাহরিন চৌধুরীর স্বামী মনসুর হেলাল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “মাহরিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পুড়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে, ও প্রায় ১০০ শতাংশই দগ্ধ হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, “লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে মাহরিন আমার সঙ্গে কিছু কথা বলেছে। বলেছে, স্কুল ছুটির পর সে বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিল। তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। সে নিজের শরীর দগ্ধ করেও বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। আপনারা সবাই আমার মাহরিনের জন্য দোয়া করুন, যেন আমি ওকে আবার বাড়ি নিয়ে যেতে পারি।”

মাহরিন চৌধুরী প্রমাণ করেছেন, শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়, এটি আত্মত্যাগ ও ভালোবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। তার এই দৃষ্টান্তমূলক সাহস ও আত্মত্যাগ মানবতাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে। জাতি আজ এই বীরাঙ্গনার সুস্থ জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষায়।