সিডনির এডমন্ডসন পার্কের ইডি স্কয়ারে গত শনিবার সন্ধ্যায় এক অসাধারণ উৎসবের সূচনা হয়েছিল। প্রবেশপথের সামনে উপচে পড়া ভিড়, শিশুদের হাতে রঙিন পপকর্ন, গোলাপি আর হালকা সবুজ রঙের পোশাকে সেজে আসা দর্শক—সব মিলিয়ে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, জন এম চু পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত ‘উইকেড: ফর গুড’ দেখতে আসা দর্শকেরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই সিনেমার রঙিন জগৎটাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বাস্তব জীবনে। মনে হচ্ছিল, হলে ঢোকার আগেই সবাই ঢুকে পড়েছে এক জমকালো রূপকথার আবহে।
ব্রডওয়ের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল ‘উইকেড’ অবলম্বনে নির্মিত এই চলচ্চিত্র সিরিজের দ্বিতীয় সিকুয়েন্স, ‘উইকেড: ফর গুড’, বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে ২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর। প্রথম অংশের সাফল্যের পর দ্বিতীয় পর্বের জন্য প্রত্যাশার চাপ ছিল স্বাভাবিকভাবেই প্রবল। আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক জন এম চু এবার সেই চাপ সামলাতে গিয়ে রঙিন জাঁকজমকের পাশাপাশি গল্পের আবেগময় স্তরটিকে আরও গভীর করেছেন। আগের পর্বের দৃশ্যায়ন আর উজ্জ্বলতার ঝলক এখানে কিছুটা সংযত হলেও সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব আর বিশ্বাসঘাতকতার সূক্ষ্ম টানাপোড়েনে এই পর্বটি আলাদা মাত্রা পায়।

‘উইকেড: ফর গুড’ মূলত দুই ভিন্ন মেরুর দুই ডাইনির জটিল বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে আবর্তিত। এই দুই প্রধান চরিত্র হলো সবুজ ত্বক নিয়ে জন্মানো মেধাবী কিন্তু ভুল বোঝা এলফাবা (যিনি পরবর্তীকালে ‘ওয়েস্টের খারাপ ডাইনি’ হিসাবে পরিচিত হন) এবং জনপ্রিয়, উজ্জ্বল গ্লিন্ডা (যিনি ‘উত্তরের ভালো ডাইনি’ হিসাবে পরিচিত হন)। এই সিকুয়েল পর্বে তাদের সম্পর্কের ভাঙন, ক্ষমতার ব্যবহার, নৈতিক জটিলতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হয়েছে। এটি জাদুকরি গান, নৃত্য ও দৃশ্যের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষমতা, বন্ধুত্বের মূল্য এবং নিজেকে চেনার লড়াইয়ের মতো গভীর বিষয়গুলো তুলে ধরে। এই ছবির বড় শক্তি হলো এটি একই সঙ্গে শিশুদের জন্য রঙিন রূপকথা এবং বড়দের জন্য নৈতিক জটিলতা নিয়ে এক পরিণত গল্প উপস্থাপন করা হয়।

সম্প্রতি সিনেমা হলের ভেতরের গভীর রেশ যেমন লক্ষণীয়, তেমনি হলের বাইরেও ছবিটির ছাপ স্পষ্ট দেখা যায়। ইডি স্কয়ার ছাড়াও সিডনির নানা শপিং সেন্টার আর ডিপার্টমেন্ট স্টোরে চোখে পড়ছে সিনেমার থিমে সাজানো পণ্য। এমনকি কেমিস্ট ওয়্যারহাউসে সিনেমার মোড়কে সুগন্ধি, কোথাও ম্যাজেন্টা আর সবুজ রঙে মোড়া মিষ্টান্ন, কফি শপের কাচে পোস্টার, শপিং মলের ব্যানার—সবকিছুই প্রমাণ করছে যে, পুরো সিডনি শহরই যেন এই সিনেমার রঙে রঙিন। হল ছাড়ার পর শিশুদের উচ্ছ্বাস আর বড়দের আলাপ শুনে বোঝা যায়, সুর আর গল্পে মোড়া এই আমেজ অনেক দিন মনে থাকবে। এমনকি ছবি দেখার দুই দিন পর স্কুল থেকে ফিরে মেয়ের নতুন করে ছবিটি দেখার আবদার প্রমাণ করে, এই সিনেমার আসল সাফল্য শুধু বক্স অফিসের অঙ্কে নয়; বরং ছোট ছোট সেই মুহূর্তগুলোতে—যেখানে গল্প শেষ হয়ে গেলেও তার রেশ থেকে যায় দিনের পর দিন, পরিবার আর স্মৃতির ভেতর।

বক্স অফিসে অপ্রতিরোধ্য সাফল্য
ছবিটির উন্মাদনা শুধু হল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকেনি, তার প্রতিফলন পড়েছে বক্স অফিসের হিসাবেও। ইউনিভার্সাল পিকচার্সের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমাটি মুক্তির পর এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে। শুধু উত্তর আমেরিকাতেই, মুক্তির প্রথম দিন ২১ নভেম্বর ৪ হাজার ১১৫টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির আয় দাঁড়ায় প্রায় ৬৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, যা ইউনিভার্সালের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ওপেনিংগুলির মধ্যে একটি। এই বিশাল অঙ্কের আয় প্রমাণ করে যে, ছবিটি বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে এবং একটি ব্লকবাস্টার হিট হিসাবে নিজেদের স্থান পাকা করেছে।






































